মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...৪

4.

সাদা লুজ শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল মেয়েটি। বয়স ২৪-৩০ এর মধ্যে। চুলগুলো কোনোমতে একটা ঝুটি বেঁধে ছুটছে। একটা পা অচল - তারপরও ক্রাচে ভর করে এক লেকচার হল থেকে অন্য হলে ছুটে যাচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে ইচ্ছা হচ্ছিল - আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখি। সে এক অন্যরকম ফিলিং। এত্তখানি কষ্ট করে - মেয়েটি কনভেনশনে হাজির হয়েছে হয়েছে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম/এপ্লিকেশনের কথাগুলো শুনতে। 

ইসনা (ISNA - Islamic Society of North America) কনভেনশনে এমন কিছু দেখেছি - যা আমাকে ইসলামের মানবিক গুনাবলীগুলো নিয়ে আবার চিন্তা করতে শিখাচ্ছে। এখনো ওই দিনগুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে, এমনকিছু হটাত মনে পরে - যা আবার নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়। আর মনে হয় দেশে আমরা যারা ইসলাম মানতে চাই (বা ইসলামের কথা বলি), তাদের আরো কতকিছু শেখার বাকি আছে। 

সামাজিক কিছু ব্যাধি আমাদের দেশের মানুষের ভেতর রয়ে গিয়েছে - জনম কা জনম (জেনেরালি স্পিকিং); সেটা থেকে ইসলামী-ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী এই আমরাও সেটার মূল উত্পাটন করতে পারিনি। ওই ক্রাচে ভর করা মেয়েটিকে আপাত দৃষ্টিতে দেখে আমাদের দেশের বেশিরভাগের একটা জাজমেন্ট আসত। 'জিন্স পরে আসছে মেয়েটা'... 'মাথায় একটু কাপড় দিলেও তো পারত - আল্লাহর নাম নেয়া হচ্ছে '... কিন্তু একারণে কত উত্সুক মানুষ যে দূরে ছিটকে যায় - তার হিসেব নেই।আমরা বেশিরভাগ ভাবিনা - সেই মেয়েটাকে দেখে আল্লাহর কুরআনের ওই আয়াত মনে পড়তে পারত, যেখানে আল্লাহ বলছেন - 'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে চল, যার সীমানা হছে আসমান ও জমিন, যা তৈরী হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য' (সুরা আল-ইমরান, ১৩৩). হতে পারে ক্রাচে ভর করেই সে এই রেসে অনেকের আগে চলে যেতে পারে।

আরে, তাকওয়ার মাপ কি আল্লাহ আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন? [শুধু একটা উদাহরণ নেই - হিজাব করে যেই সওয়াব আয় করছি, তা এক গিবত দিয়ে যে উড়িয়ে দেই - আল্লাহর স্কোরিং এ আমাদের নেট স্কোর কত হয় তখন?] 

ওখানে একই জায়গায় বসে আছে - নিকাবি, হিজাবি, হিজাব-ছাড়া লুজ কাপড় পরা মেয়েরা; আবার টাইট জিন্স পরা মহিলাও। উদ্দেশ্য একই - একটু যদি শিখতে পারি। ওই দেশে যারা ইসলাম প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের মেন্টাল ম্যাচিউরিটি অনেক বেশি। সেটা ওখানকার প্রতিটা লেকচারে রিফ্লেক্ট হয়েছে। আগ্রহকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে ওস্তাদ। সব শুনে মনে হয়েছে - এদেশে একটা ম্যাস ট্রেনিং করতে হবে আমাদের নিয়ে। টপিক হবে -'হাউ টু এম্পাথায়জ উইথ ইউর পিপল'. 

এই এম্পাথী না থাকলে - ওই মেয়েটি ক্রাচে ভর করে লেকচার শুনতে আসতনা; আমার ঠিক পাশের সিটে বসা - সোনালী চুলের, সুট পরা, নেল পলিশ করা, Prada ব্র্যান্ডের ব্যাগ নিয়ে আসা গ্ল্যামারাস কর্পোরেট ভদ্রমহিলা, সে ইয়াসমীন মোগাহেদের লেকচার শুনে সাদা রুমাল দিয়ে চোখের পানি মুছ্তনা। হুইলচেয়ারে করে বয়স্ক ভদ্রলোক নতুন করে ইসলাম শিখতে আসতনা। আর না বয়স্ক এবং টিনেজার একটি টপিকে মন বসাতে পারত। তাও আবার আমেরিকার মত জায়গাতে।

মুহাম্মদ (স) এর পার্সোনালিটির উধাহরণগুলো কতই না সুন্দর করে উপস্থাপন করছে। 

Living the values - not talking the values.....and so unlike us! 
May He Guide us all....

[contd...]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন