শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩

নিভৃতে

গত পরশু মা তার সিনিয়র (বেশ নামকরা একজন ডাক্তার) এক আন্টির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তাঁর ধানমন্ডির ক্লিনিকে। গতকাল ডাইনিং টেবিলে বসে যখন আম্মার দুষ্টমি করছিল - তখন মা সেটা দেখছিল আর বলছিল, 'একজন ৭টা বাচ্চা নষ্ট করেছে'!

'৭টা'?

মা পরে ধীরে ধীরে বলল - ক্লিনিকে যখন দেখা করতে গিয়েছিল, তখন এক মহিলা এসেছে আন্টির কাছে। তার নাকি বাচ্চা হচ্ছেনা। হিস্ট্রি নিয়ে জানা গেল - সেই এর আগে ৩টা বাচ্চাকে মেরে ফেলছে জন্মের আগেই। যেটাকে ডাক্তারি টার্মে বেশ 'ভদ্র' ভাষায় বলে 'এম,আর'।বাচ্চার টাইমিং ঠিক নাই। 'বাচ্চা ভুল সময় দুনিয়াতে আসতে চেয়েছিল' - তাই ৩টাকে ধরে পর পর ফেলে দিল। মা শুনে যখন কিছু বলতে গিয়েছিল, তখন আন্টির এসিস্টেন্ট বললেন, 'আপা, কালকে একজন আসছিল - ৭টা বাচ্চা নষ্ট করসে। এখন আর বাচ্চা হয়্না দেখে চিকিত্সা করতে আসছে'!

৭টা বাচ্চা ফেলে দিয়েছে। এদের কাছ থেকে শুনে মনে হবে - সেই unborn বাচ্চাগুলো হচ্ছে আবর্জনা।' টাইমিং ঠিক নাই। খরচ বাড়াবে। পড়াশোনায়/কাজে উটকো ঝামেলা পাকাবে। So - just get rid of them'. দেখে অবাক লাগে - এরাও নাকি মা?! আর সবকিছু বাদ দেই।সব ধরনের নাড়ির সম্পর্ক বাদ দেই। শুধু একটা fact যদি মাথায় নেই - আর সেটা হচ্ছে, এই বাচ্চাগুলোর তো জান ছিল।মানে এরা তো জীবিত ছিল। এদেরও তো এক পর্যায় গিয়ে খারাপ/ভালো লাগার অনুভূতি থাকে।এরাও তো ব্যথা পায়। হ্যা, জন্মের আগেই। আর দুনিয়াতে এসব নিষ্পাপ বাচ্চার আসার অধিকার যখন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে অন্য এক মানুষ তখন কি পরিমান নির্মম, নৃসংশ এক অবস্থায় সে বিদায় নিচ্ছে 'মা' নামের সেই মানুষের ভিতরে থাকা অবস্থাতেই।
আর এতগুলো বাচ্চা দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার পর - এখন নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বাচ্চা নেবার চেষ্টা চলছে।

মা-র গর্ভের ভিতরটা হচ্ছে একটা লাইফ-সাপোর্ট এর মত। খাবার, শ্বাস-প্রশ্বাস - সবকিছুর জন্য সেই বাচ্চা ওই গর্ভের উপর নির্ভরশীল।সেটা হয় বাচ্চার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যখন সেই লাইফ-সাপোর্ট-র সব যোগাযোগ মা নিজ হাতে হুট করে টেনে ছিঁড়ে ফেলে, টেনে-হিচড়ে তার সবধরনের সহায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যখন এই নির্মম অবস্থায় বাচ্চা আর বাঁচতে পারেনা - তখন আমরা সেটাকে মেনে নেই। কারণ সেটা হচ্ছে গর্ভের সেই পর্দার আড়ালে। কিন্তু একই সমাজে যখন কোনো মা - তার ৩-৪ বছরের ছেলেকে খুন করে, তখন হই-হুল্লোর পড়ে যায় সব জায়গায়। Media তে ফলাও ভাবে বিবরণ আসতে থাকে - কত পাষন্ড সেই মহিলা। আমরা বিলাপ করতে থাকি, মা-দের অবস্থান এবং তাদের মর্যাদা কিভাবে ধুলিস্যাত হচ্ছে। সমাজ কই যাচ্ছে - হায় হায়! কোনো বাপ যখন তার বাচ্চাকে মেরে ফেলে তখন বলা হয় - জানওয়ার ছাড়া সে কিছু না। কিন্তু যখন এক এক জন মা তার ৩-৪টা বাচ্চা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে, এক একটা বাপ চাচ্ছে সেই শিশুকে দূর করতে, আর এসব কোনো দোষ হিসেবে গন্য হচ্ছেনা - তখন সেই সমাজের ভিতর থেকে পঁচে যাচ্ছে, একটা পর্দার আড়ালে।

আল্লাহ নিশ্চই সুবিচারক। এই দুনিয়াতে এসব মার্ডার কেসের আসামীগুলো কোনো বিচারের সম্মুক্ষীন না হলেও - হাশরের ময়দানে হবে। আর তখন সেই নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে - 'তোমাদের কোন দোষের কারণে মেরে ফেলা হয়েছিল?'

'দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিযে থাকি। নিশ্চই তদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ' (সুরা বাণী ইসরাইল, আয়াত ৩১)
'যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো' - (সুরা তাকবির, আয়াত ৮-৯)

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

কিছু ছোট প্রশ্ন (জাফর ইকবাল স্যার এর কাছে):

১। আমরা অনেকেই জানি ও বিশ্বাস করি আমাদের দেশের অনেক তরুণ অনেক শক্ত বিশ্বাস আর ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং সেই শক্ত বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটছে - তাদের প্রতিবাদী কন্ঠে আর তাদের অদম্য স্পৃহায়। বিশ্বাসে দুর্বলতা বা আবছা হবার কারণ কি কম বয়স? বিজ্ঞানের কোন theory এটাকে support করে? একটাই ফ্যাক্টর থাকতে পারে - সেটা হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আর এই globalization, তথ্য প্রযুক্তি, আর ফাস্ট-ট্র্যাক জীবনধারার যুগে বোধ করি অভিজ্ঞতার সাথে বয়সের সম্পর্ক দিন দিন কমে যাচ্ছে। সুতরাং আপনার নিজের বয়সের অভিজ্ঞতাকে অন্য তরুণদের উপর short-circuit করাটার পেছনে বয়সের উদ্ধৃতি দেয়াটা কতখানি সময়োপযোগী?

২। বৈচিত্রের সৈন্দর্য (বা the beauty in diversity) - খুবই প্রাসঙ্গিক একটা বিষয়। কিন্তু বিশ্বাসে বৈচিত্র থাকাটার অর্থ কি 'আমার বিশ্বাসটাকে সত্য মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান দেখানো' নয়? নিজের বিশ্বাসটা ঠিক - এই আত্মবিশ্বাসটুকু একটা তরুণ বা তরুনীর থাকতেই পারে। আমার পাশের মানুষটির ধারণা আমার বিশ্বাসে হয়ত সঠিক নয়। কিন্তু তাকে তার জায়গাতে থেকে তার বিশ্বাসে অটল থাকাটাকে সম্মান দেখানো - সেটাই আমার কর্ত্বব্য। এটাই তো সৈন্দর্য। A combination of self-confidence and mutual respect.
আপনার প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছে ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো তরুণ আত্মবিশ্বাসী - এটাই আপনার কাছে একটা আবছা জিনিস। এবং এই আবছা জিনিস থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনি তরুণদের short-circuit করাতে চাচ্ছেন। আমার কাছে আপনার এই ধারনাটা খুবই অসম্মানজনক মনে হয়েছে। বৈচিত্রের সংগাটা কি এটাই হবে?

৩। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা - এটা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে একটু আধটু বিরাজ করে। কোনো ধর্মে বিরাজ করেনা। যাকগে। আপনি বারবার অন্য ধর্মের লোকদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। একটাবার মুসলিমদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ এনেছেন কি? না এনে থাকলে - কেন? আপনার sense of diversity কি মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে গঠন হয়েছে? আপনি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখেন - তাহলে আপনার লিখায় অত্যাচারের বিষয়টা statistically correlated হওয়াটা যৌক্তিক ছিল। আজকের বিশ্বে মুসলিমদের মত অত্যাচারিত গোষ্টি সেক্ষেত্রে আর কেও নেই। কিন্তু আপনার লেখা দেখে মনে হবে - মুলসিম? তাও আবার অত্যাচারিত? সত্যি - short circuit!

মুসলিম অত্যাচারিতদের প্রতি আপনার এই অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? আমাদের দেশেই যখন নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসে আত্মবিশ্বাসী কিছু মুসলিম তরুনকে আপনি টিটকারী দিয়ে লেখা ছাপান তখন - আপনার 'বৈচিত্রের সৈন্দর্য' কোথায়? যখন আপনার প্রতিবাদী কন্ঠ শুধুমাত্র আপনার পছন্দনীয় কিছু বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠে - তখন আপনার এত বয়স হবার পরও চিন্তাধারা বা ধারণা কতখানি স্পষ্ট হয়েছে?

৪। রামুর ব্যাপারে আপনি বলেছেন এদেশের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ আপনি দেখেননি। শুধুমাত্র ফেইসবুকএ 'লাইক' দেয়া দেখেছেন। আপনার এই ভ্রান্ত ধারণা লালন করার কারণ কি? কারণ কি এটাই কি যে আপনি শুধু ফেইসবুক-এর জগতে বসবাস করেন? রামুতে reconstruction এর কাজে কত তরুণ স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে যোগ করেছে - তা কি আপনার জানা নেই? তরুনদের শুধু চিন্তাধারা আপনার কাছে আবছা লাগছে না - আপনার অজানা তাদের কাজগুলোও আপনার কাছে আবছা লাগছে। নাকি? ঠিক তেমনি তাদের ধর্মীয় আত্মবিশ্বাস আপনার frequency তে না ধরা পড়ায় - সেটাও আপনার কাছে আবছা লাগার কারণ হতে পারে কি?

৫। আয়নাতে দেখছেন - আপনার চুল, গোফ সব পেঁকে সাদা হয়ে যাচ্ছে। আপনি নিজেকে বয়স্ক মনে করছেন না। কারণ 'you feel young at heart.' আপনার নিজেকে বয়স্ক মনে হয়না। আপনি দয়া করে আবার একটু আয়নার সামনে দাড়াবেন কি? চুল, গোফ - শুধু সাদা হচ্ছেনা। আপনি দেখবেন আপনার চামড়াও কুকড়িয়ে যাচ্ছে। There are visible wrinkles on your face. আপনার cellular senescence হচ্ছে। আপনার বয়স বেড়ে আপনি একটা সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সেই সত্য, সেই সময়টাকে - আজ পর্যন্ত কোনো নাস্তিকও মিথ্যা প্রমান করতে পারেনি। আপনি তো নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা দেননি। তাই এই সত্যটাকে অনুধাবন করাটা আপনার কাছে আরো সহজ হবে। সে সত্যটা হচ্ছে মৃত্যু।

আমার শেষ প্রশ্ন - এই মৃত্যুকে আপনি কিভাবে দেখেন?

[Aging - রেফারেন্স এর জন্য Muhammad ibn Yusuf al-Haraw এর Ainul Hayat বইটি পরে দেখতে পারেন। আপনি হয়তবা ধারণা করবেন - মুসলিমদের ইসলামিক রেফারেন্স আপনার দরকার নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন - এটাই হচ্ছে Aging Process নিয়ে বিশ্বের প্রথম নিয়মনিষ্ঠ বই। wikipedia-র মতে 'The book discusses behavioral and lifestyle factors putatively influencing ageing including diet, environment and housing conditions. Also discussed are drugs that may increase and decrease ageing rates.' বইটি আপনার পছন্দ হতে পারে।]