বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১১

সেই আমরা :) - ৩

সমগ্র বাঙালি আন্ডা বাচ্চাগুলার কাছে ভয়ের কারণ ছিল আমার মা-র ইনজেকশন দেবার ক্ষমতা! বিশেষ করে খাওয়া নিয়ে ঘেনঘেন করলেই - আন্টিরা আমার মা'র নাম ধরে threat দিতেন। এই খাওয়া নিয়ে আমি নিজেও ভুক্তভোগী - জোর করে খেতে হত, না খেলে উপায় নেই (আমার ক্ষেত্রে যদিও ইনজেকশন প্রযোজ্য ছিলনা; চিকন সুচকে ভয় পেতামনা; আমার ক্ষেত্রে threat ছিল টিভি না দেখতে পারা!)। খেতে হবে - স্বাস্থ্য ভালো করতে হবে। রুচি কিংবা ক্ষুধা - কোনটাই কোনো পাত্তা পেতনা মা'র কাছে।

আমাদের বাসায় ময়লা ফেলার সিস্টেম ছিল সে সময়ের তুলনায় বেশ interesting। ফ্ল্যাট থেকে বেড় হয়েই, সিঁড়ির উল্টা দিকের একটা রুমে, দেয়ালের সাথে লাগানো একটা ড্রয়ার-এর মত ছিল। ঐ ড্রয়ার খুললেই - একটা লম্বা টানেল। টানেলটা বাসার একদম নিচতলায় গিয়ে একটা বড় ময়লার ট্রলিতে গিয়ে ঠেকত। উপর থেকে ঐ ড্রয়ার খুলে ময়লা ফেলে দিলেই - সেটা লাপাত্তা হয়ে যেত। তাই, খাবার সময় হাতের মুঠোয় খাবার নিয়ে ঐ ড্রয়ার পর্যন্ত যেতে পারলেই রক্ষা - চোখের নিমিষে খাবার শেষ! কিন্তু এই বুদ্ধি তখন রপ্ত করতে পারেনি আমাদের 'কুবরা'। কুবরা'রা ছিল তখন ৩ বোন। খাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি টেনশন করতেন আন্টি (কুবরার মা)। আন্টি খুব করে বলতেন 'আমার মেয়েদেরকে তো আমি খাওয়াতে পারিনা, ভাবী (মানে আমার মা) আমার বাচ্চাগুলাকে খাওয়া শিখিয়েছে!' এমনও দিন ছিল যখন বড় এক গামলায় খাবার নিয়ে মা সব আন্ডা বাচ্চা গুলাকে একসাথে খাওয়ায় দিত।ঠিক এরকম একদিন, মা খাওয়ায় যাচ্ছে আমাদের সবাইকে। কুবরা পটাপট খেয়ে ঘুরে ফেরত এসে আবার মুখে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের এক আগের লোকমাটাও তখনো মুখের ভিতর। মা তো বরই খুশি - কুবরার খাওয়ার উন্নতি দেখে। কুবরাও খুব খুশি - মা'র মুখে প্রশংসা শুনে।

রাত যখন ১১টা - সবাই যে যার বাসায় চলে গেছে। বাথরুমের বেসিনের কাছে গিয়ে দেখি - কমোডে খাবারের স্তূপ! কিচ্ছু বুঝার উঠার আগেই সজোরে চিত্কার করে আব্বাকে ডেকে নিয়ে আসলাম। খাবার কিভাবে ওখানে যাবে - সেটা তখনো মাথায় খেলার মত বুদ্ধি হয়নি। পরে খেয়াল করে দেখলাম ওখানে কিছু স্টিকারও পড়ে আছে (ঐদিন chewing-gum বিতরণ ছিল - আর সেটার সাথে থাকত স্টিকার)। এক একজনের ভাগে এক একরকম স্টিকার থাকায় - কুবরার স্টিকার কোনটা সেটা নির্ণয় করা কঠিন ছিলনা; ওর ঐদিনের খাওয়া দাওয়ার উন্নতির রহস্য ওখানেই শেষ হলো!


কুবরার আরেক বৈশিষ্ট ছিল - খাঁমচি দেওয়া! কোনো কিছু তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই জোরসে এক খাঁমচি দিয়ে দিত দৌড়। পরে তার এই বৈশিষ্ট উত্তরাধিকার সূত্রে তার সবচেয়ে ছোট বোনটা পেয়েছিল। ছোট বোন আর ফাহিমার ভাই ছিল একই বয়সের - কিন্তু ২জনের স্বাস্থ্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। কিন্তু স্বাস্থ্য আর গায়ের জোরের যেই সম্পর্ক - তা পুরাই ভুল প্রমানিত করে দিত ঐ খাঁমচির জোর। আর সেজন্য আন্টির কাছে নালিশ ও যেত কম না। তখন মা'দের মার খাওয়া মানে হচ্ছে সবার সামনে অপদস্ত হওয়া। তাই বকা/মার যাই হোক - ওটার সম্ভাবনা থাকলেই আমরা দিতাম উল্টা দিকে দৌড়। আর কুবরা? সেই দৃশ্য হত অন্যরকম. বকা/মার যেটাই সামনে আসুক না কেন, সে আরো ২ হাত দিয়ে জড়ায় ধরত আন্টিকে - আন্টিও তাকে পেত হাতের কাছে!

এখন কুবরা নিজেই একজন মা! থাকে দেশের বাইরে। তাই ওর সাথে ওর পিচ্চিটার কতটুক মিল তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা... কিন্তু পিচ্চির চোখে মুখে দুষ্টুমি আর মাথায় বুদ্ধি গিজগিজ করছে - ছবি দেখলেই বোঝা যায়। অপেক্ষা করছি কোনদিন সামনা সামনি দেখে বিশ্লেষণ করা যাবে...


(To be continued...)

সেই আমরা :) - ২

সারা-রা ছিল ৩ বোন, ১ ভাই। বোনদের যেই একটু শান্ত-শিষ্ট ভাব থাকে - তার ধাঁরে কাছেও ছিলনা ৩ জন। বড়টা যা ছিল, ছোট ২টা তা উসুল করে নিত। একবার সেই দল-বল নিয়ে মক্কা যাওয়া হয়েছিল - যতদুর মনে পরে একসাথে ৫ টা পরিবার। মক্কায় যেই হোটেলগুলোতে থাকা হত - সেখানে প্রতিটা রুমে ফ্রিজ রাখা থাকত; প্রতিটা রুম ছিল ডাবল. সেবার যে হোটেল ঠিক করা হলো - সেখানে একটা রুম একটু ব্যতিক্রম ছিল; বেশ বড় আর সেখানে ৫টা বেড। সব আন্ডা বাচ্চাগুলা ওখানে জড়ো হলাম। আমরা ২ পরিবার আবার ঐদিনই বিকালে মদীনার দিকে রওনা হব - তাই তাড়াতাড়ি ওমরা সেরে ফেলার চিন্তা ছিল। যখন এক একজন এক এক দিক ছুটোছুটি করছি - ঠিক তখন ওই ব্যতিক্রম রুমটার ভিতর থেকে কোন সময় সারা আটকিয়ে ফেলেছে খেয়াল করেনি কেও।


বেশিক্ষণ যায়নি - ভেতর থেকে কেমন যেন একটা শব্দ আসতে লাগলো। কয়জন দরজায় কান লাগিয়েও বুঝলো না কি হচ্ছে। বাইরে থেকে অনেক চেচামেচির পর বোঝা গেল ভিতরে সারা চিত্কার করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কোনো কারণে সে খুলতেও পারছেনা দরজা, না কিছু বলতে পারছে। উপায় না পেয়ে ডাকা হলো - বাবা মা'দের। লক করা দরজা। কোনোভাবে জোর জবরদস্তি করে লক ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকা হলো। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল - চেয়ার নিয়ে ফ্রিজ এর সামনে রাখা। উপরে ডীপ ফ্রিজের দরজা খোলা। চেয়ার এর উপর সারা দাড়ানো আর তার মাথা ওই ডীপ ফ্রিজের ভিতর। সে ওই অবস্থায় চিত্কার করার চেষ্টা চালাচ্ছে - কিন্তু মাথা কেন যেন বের করতে পারছিলনা। পরে দেখা গেল - ওর জীভ বের করা, আর সেটা ডীপ ফ্রিজের wall এ আটকে আছে! আন্ডা বাচ্চারা শুধু তাকিয়ে থাকলো ভয়ংকর সেই দৃশ্যের দিকে আর বাবা'রা লেগে গেল উদ্ধার করতে - কারেন্ট অফ করে, জীভ এর উপর পানি ঢেলে, আরো কি কি করে সারা-র ছাড়ানো হলো ফ্রিজ এর দেয়াল থেকে। জীভ এর অবস্থা টাইট হয়ে গিয়েছিল বাজেভাবে। আর যারা চিন্তা করছে জীভ টা ওখানে গেল কেন - তাদের অবগতির জন্য - সারার খুব বরফ খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল, ডীপফ্রিজের দেয়ালে তাই সে চাটা শুরু করেছিল!! যারা physics পড়েছে - তাদের কাছে বোঝাটা সহজ হবে - বরফ গলেছিল জীভের তাপে, কিন্তু পরক্ষনেই সেটা আবার freeze হয়ে গিয়েছিল জীভটা সহ! এরপরের কয়েক মাস সারার কান্ডটা ছিল হট-টপিক - সবাই ওকে বরফ সাধত। :P

সারার ছোট ভাইটা যখন ১.৫ কি ২ বছর বয়স, তখন সৌদি আর বাংলাদেশ - ২ দেশেই টিভিতে দেখানো শুরু হলো Macgyver। সারারা তখন দেশে, আর আমরা সৌদিতে। তার যখন সৌদিতে ফিরল - তখন ওই ১.৫ বছর এর পুচকার দেখি চুল পিছন দিয়ে একটু লম্বা, সামনে দিয়ে ছাঁটা। চুল নাকি সে আঁচরায়না। হাতে সব সময় হয় একটা ছোট গাড়ি নাহয় screw driver। আর কেও তাকে তার আসল নাম ধরে ডাকলে সে রেগে যাচ্ছে। সে একটা বোতলে তেল নিয়ে - সেটা ঢেলে ফেল দিল, হাতে একটা ফিতা বেঁধে সেটা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলল; তারপর সে announce করত, 'আমি Macgyver'।

আরব বাচ্চারা ছিল বিচ্ছুর দল। বিদেশী বাচ্চাদের দেখলেই বেড়ে যেত ওদের মারামারি করার প্রবণতা। পাথর মারা ছিল তাদের বৈশিষ্ট; গাড়ির ছোট inidcator লাইট গুলা প্রায়ই ভাঙ্গা পাওয়া যেত - কারণ কোনো এক বাচ্চা পাথর ছুড়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। এক পর্যায় গিয়ে - সে এক পক্ষের 'অত্যাচার' সহ্য হলনা। একদিন, হুট করেই ফাহিমাদের বাসার সামনে পুরা রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল। ওদের বাড়িওয়ালা ছিল সৌদি, সেই বাড়িওয়ালার ছেলে তার দল বল নিয়ে পাথর আক্রমন শুরু করলো। শুরু হলো সৌদি বনাম বাঙালি বাচ্চাদের মারামারি। পাথর ছোরা থেকে শুরু করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া - কোনটাই বাদ থাকেনি। মারামারির সময় পুরা ধুলা উড়ে চারিদিকে তোলপার হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ যাবার পর আন্টি (ফাহিমার আম্মা) রান্না ঘরে কি করতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখে বাইরে ধুলা বালি উড়ে একাকার! বের হয়ে দেখে তুমুল মারামারি চলছে। সব মা'রা বের হয়ে যেই উঠানে আসল - অমনি সৌদিগুলো দিল দৌড়। আর আমরা মনে করলাম - বেশ এক কাজ করেছি! হাত পা ছিলে ফেরত এসে মনে হলো - এর চেয়ে বড় বীরত্ব জীবনে দেখায়নি! :P এই মারামারির পর confidence বেড়ে গিয়েছিল। এরপর আমাদের বাসার সামনে যখন দোলনা খেলতে গিয়ে ফিলিস্তিনি বাচ্চারা সেটা কেড়ে নিতে এসেছিল - তখন দোলনা দিয়েছিলাম ঠিকই - কিন্তু একদম ছুড়েই দিয়েছিলাম. আর সেই দোলনা গিয়ে লেগে গিয়েছিল ফিলিস্তিনি মেয়ের ঠোঁটে!


(To be continued...)

সেই আমরা :) - ১


অনেকদিন ধরে লেখা হচ্ছেনা। আসলে লেখার জন্য যেই ছোট একটা push লাগে, সেটা খুঁজে পাচ্ছিলামনা। ২-৩ দিন আগে আন্ডা-বাচ্চাকালের এক বান্ধবী সেই আদিম কালের একটা ছবি ফেসবুক-এ পোস্ট করে দিল। ছবিতে আমাদের সবার চুল দেখি একই ধাঁচে কাটা! চুল ঝুঁটি করার মত বড় হয় নাই-- কিন্তু তাও চুলগুলো টেনে সে ঝুঁটি বেঁধে সজারুর কাঁটার মত মাথার উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া। ক্যামেরার সামনে সব আঁটশাট হয়ে দাঁড়িয়ে-- লাইন ধরে ছবি তুলছি আমরা। এক একজনের চেহারায় সেরকম এক্সপ্রেশন! ছবি দেখে হাজার স্মৃতি একের পর এক এসে মনে ভীড় করলো। মনে হলো এইতো সেদিনের ছবি! কিন্তু বছর হিসেব করে দেখলাম ছবিটা প্রায় ২ যুগ আগের! নিজেকে কেমন বুড়ি মনে হলো (obviously!); সেই ছোটবেলার নিরীহ . এখন আমরা সবাই দেশে. কিন্তু আমাদের ছোটবেলা দেশে কাটেনি. তাই অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন ধরনের ছিল. আশেপাশে বাংলাদেশী ছিল হাতে গোণা। যারা ছিল - তারা নিকট আত্মীয় থেকে কোনো অংশে কম তো ছিলই না, বেশি কিছু ছিল নাকি সেটা বিবেচনার বিষয়।

থাকতাম সৌদিতে - একদম দক্ষিণে, লোহিত সাগরের ধারে তুলনামূলক ছোট একটা শহরে। ওখানে রিক্সা বা বেবিট্যাক্সি মার্কা বাহন না থাকায়, বাবারাই ছিলেন একমাত্র চালক. তাই সবার বাবার চাকুরীর কারণে সারা সপ্তাহ বাসায় কাটাতে হত। আরবী স্কুল ছাড়া কোনো স্কুল ছিলনা, তাই স্কুল-বঞ্চিত ছিলাম। আমার বাবা/মা দু'জনই চাকুরী করায় আরেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, যা নিয়ে হয়ত সামনে আরেকদিন লিখতে হবে। সপ্তাহে একদিন আমাদের re-union হত।কারো না কারো বাসায় বাবা-মা তাদের পোলাপাইন সহ উপস্থিত হতেন। নিজেদের মধ্যে সিরিয়াস আলাপ আলোচনা; আর আমাদের সে কি আনন্দ! একসাথে বারো-চোদ্দটা বাচ্চা এক জায়গায় - বাবা/মাদের আলাপের ঘর ছাড়া আর যেকোনো জায়গায় যা ইচ্ছা করা। এক একজন এক এক প্রকৃতির...আকার আকৃতিও এক এক ধরনের. একবার এক আন্কেল একটা কার্টুনএর সাথে আমাদের তুলনা করেছিলেন (সেই আঙ্কেলের তখন ৪টা আন্ডা-বাচ্চা আমাদের মধ্যে ছিল)। কার্টুনটার নাম ছিল 'captain majed' - যেখানে জুনিয়র ফুটবল খেলার দৃশ্য থাকত। এক খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড় এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা - কেউ চশমা পড়া-কারো চোখ ছোট, কেউ মোটা - কেউ চিকন, কেউ সরল রেখায় চলে - কেউ একটু চালাক; কিন্তু গোল করার সময় ঠিকই করে! এই তুলনার পেছনের কাহিনী বুঝার বুদ্ধি তখন গজায় নাই - তাই শুধু শুনেছিলাম। কিন্তু এখন চিন্তা করলে মনে হয় আসলেই তো! সেই কাহিনী মনে পড়লে শুধু মনে হয় - ইয়া আল্লাহ! কি চিন্তাধারা ছিল আমাদের! অদ্ভূত কিন্তু নিরীহ! আলাদা ধরনের সুন্দর একটা উপলব্ধি। খুব মিস করি এখন!

আমাদের re-union এর এক এক মেম্বার-এর কিছু কাহিনী নিচে তুলে ধরা হলো। (নিচে সবার ছদ্মনাম দিতে হচ্ছে , যাতে বিব্রত বোধ না হতে হয় :-D; এরপরও যদি পরিচয় প্রকাশ হয়ে পরে - তাহলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করা হলো)।

সৌদিতে গিয়ে আমার সমবয়সী (আমার তখন বয়স ৪ বছর) প্রথম একজনকে দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। সে নিজের মধ্যে একটা ভাবগাম্ভীর্য বজায় চলত আর সবাইকে পরামর্শ দিতে বেশ পছন্দ করত। কিছু আরবী কথা বলায় আমি মেনে নিয়েছিলাম সে অনেক জ্ঞানী। আমার তখন লম্বা চুল এর প্রতি খুব কদর ছিল-- 'ফাহিমা' সেটাতেও এগিয়ে. তাই আমি তাকে আমার 'best friend' বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম। আস্তে অস্তে যখন আমাদের আন্ডা-বাচ্চা গ্যাং এর মেম্বার বাড়তে লাগলো-- তখন দেখা দিল ছোট্ট সমস্যা। তাকে ছাড়া অন্য কারো কথায় মনোযোগ দিলেই সে মাইন্ড করে বসত-- এমনকি কথা বলাও বন্ধ করে দিতো! গালটাকে ফুলিয়ে দুরে গিয়ে বসে থাকত, মায়েদের সিরিয়াস আলাপ তখন তার কাছে শ্রেয় মনে হত। সেজন্য কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হত যাতে কিছুক্ষণ পরপর ওর চোখে চোখ রেখে কথা বলি- - সে তখন তুষ্ট চিত্তে ফিরে যেত। ওর ছোট বোনটা ছিল একটু নিরীহ প্রকৃতির, একটু কিছু হলেই কেঁদে দিতো! :-D পরের দিকে ওদের একটা ভাই হয়েছিলো-- খুবই গুব্দু গাব্দু, ফর্সা করে। কিন্তু ওই পিচ্চিকে নিলেই ওরা ভয় পেত যে ওদের ভাইকে কেউ নিয়ে যাবে। ওখানে একসঙ্গে থাকার আরেক বৈশিষ্ট্য ছিল - একসাথে journey করা। আমাদের ওখান থেকে মক্কা যেতে লাগত পুরা ১ দিনের মত। ফাহিমাদের গাড়িটা ছিল station wagon; যেখানেই যাই না কেন -- সব আন্ডা বাচ্চার সীট ছিল ওই গাড়ির পিছনের হুড-এ; রাস্তায় একটা দেখার বিষয় হত বটে। একসাথে এত্তগুলা বাচ্চা পিছনে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা গাড়ি!

আমার সমবয়সী আরেকজন ছিল 'সুহা'. এক্কেবারে ভদ্র চেহারার অধিকারিণী-- যাকে দেখে মনে হত একটু 'বেশি ভালো'। আর আমার মা সব সময় ওর সাথে তুলনা করতে ভুলতেন না—“দেখেছ, কি সুন্দর করে ভাইটার যত্ন নেয়?”, “ও কত কাজ করে বাসার”,”ওর মাকে কত help করে”! মাঝে মাঝে মনে হতো-- ওর সমস্যাটা কোথায়? পরে অবশ্য ওর সাথে কথা বলে আবিষ্কার করেছিলাম ওর মা আমাকে দেখিয়ে ওকে একই কথা বলে। এরপর থেকে সেই কথার মূল্য কতখানি দেওয়া হয়েছিল মনে নাই। ওর একটা বড় ভাই ছিল-- যে সেলাই থেকে শুরু করে রান্না পর্যন্ত পারতো। একবার বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে দেখা গেল ২-৩ টা আইটেম ওই ভাইয়ার বানানো কোন একদিন এক জামা পরে এসে দেখালো-- ওই জামা নাকি ওই ভাইয়া বানিয়ে দিয়েছে। ব্যস!! মায়েদের ‘আদর্শ' বাচ্চার ক্যাটেগরী তে ফেলা হলো ওই পরিবারের বাচ্চাগুলা কে!

(To be Continued)