বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১১

সেই আমরা :) - ২

সারা-রা ছিল ৩ বোন, ১ ভাই। বোনদের যেই একটু শান্ত-শিষ্ট ভাব থাকে - তার ধাঁরে কাছেও ছিলনা ৩ জন। বড়টা যা ছিল, ছোট ২টা তা উসুল করে নিত। একবার সেই দল-বল নিয়ে মক্কা যাওয়া হয়েছিল - যতদুর মনে পরে একসাথে ৫ টা পরিবার। মক্কায় যেই হোটেলগুলোতে থাকা হত - সেখানে প্রতিটা রুমে ফ্রিজ রাখা থাকত; প্রতিটা রুম ছিল ডাবল. সেবার যে হোটেল ঠিক করা হলো - সেখানে একটা রুম একটু ব্যতিক্রম ছিল; বেশ বড় আর সেখানে ৫টা বেড। সব আন্ডা বাচ্চাগুলা ওখানে জড়ো হলাম। আমরা ২ পরিবার আবার ঐদিনই বিকালে মদীনার দিকে রওনা হব - তাই তাড়াতাড়ি ওমরা সেরে ফেলার চিন্তা ছিল। যখন এক একজন এক এক দিক ছুটোছুটি করছি - ঠিক তখন ওই ব্যতিক্রম রুমটার ভিতর থেকে কোন সময় সারা আটকিয়ে ফেলেছে খেয়াল করেনি কেও।


বেশিক্ষণ যায়নি - ভেতর থেকে কেমন যেন একটা শব্দ আসতে লাগলো। কয়জন দরজায় কান লাগিয়েও বুঝলো না কি হচ্ছে। বাইরে থেকে অনেক চেচামেচির পর বোঝা গেল ভিতরে সারা চিত্কার করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কোনো কারণে সে খুলতেও পারছেনা দরজা, না কিছু বলতে পারছে। উপায় না পেয়ে ডাকা হলো - বাবা মা'দের। লক করা দরজা। কোনোভাবে জোর জবরদস্তি করে লক ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকা হলো। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল - চেয়ার নিয়ে ফ্রিজ এর সামনে রাখা। উপরে ডীপ ফ্রিজের দরজা খোলা। চেয়ার এর উপর সারা দাড়ানো আর তার মাথা ওই ডীপ ফ্রিজের ভিতর। সে ওই অবস্থায় চিত্কার করার চেষ্টা চালাচ্ছে - কিন্তু মাথা কেন যেন বের করতে পারছিলনা। পরে দেখা গেল - ওর জীভ বের করা, আর সেটা ডীপ ফ্রিজের wall এ আটকে আছে! আন্ডা বাচ্চারা শুধু তাকিয়ে থাকলো ভয়ংকর সেই দৃশ্যের দিকে আর বাবা'রা লেগে গেল উদ্ধার করতে - কারেন্ট অফ করে, জীভ এর উপর পানি ঢেলে, আরো কি কি করে সারা-র ছাড়ানো হলো ফ্রিজ এর দেয়াল থেকে। জীভ এর অবস্থা টাইট হয়ে গিয়েছিল বাজেভাবে। আর যারা চিন্তা করছে জীভ টা ওখানে গেল কেন - তাদের অবগতির জন্য - সারার খুব বরফ খেতে ইচ্ছা হচ্ছিল, ডীপফ্রিজের দেয়ালে তাই সে চাটা শুরু করেছিল!! যারা physics পড়েছে - তাদের কাছে বোঝাটা সহজ হবে - বরফ গলেছিল জীভের তাপে, কিন্তু পরক্ষনেই সেটা আবার freeze হয়ে গিয়েছিল জীভটা সহ! এরপরের কয়েক মাস সারার কান্ডটা ছিল হট-টপিক - সবাই ওকে বরফ সাধত। :P

সারার ছোট ভাইটা যখন ১.৫ কি ২ বছর বয়স, তখন সৌদি আর বাংলাদেশ - ২ দেশেই টিভিতে দেখানো শুরু হলো Macgyver। সারারা তখন দেশে, আর আমরা সৌদিতে। তার যখন সৌদিতে ফিরল - তখন ওই ১.৫ বছর এর পুচকার দেখি চুল পিছন দিয়ে একটু লম্বা, সামনে দিয়ে ছাঁটা। চুল নাকি সে আঁচরায়না। হাতে সব সময় হয় একটা ছোট গাড়ি নাহয় screw driver। আর কেও তাকে তার আসল নাম ধরে ডাকলে সে রেগে যাচ্ছে। সে একটা বোতলে তেল নিয়ে - সেটা ঢেলে ফেল দিল, হাতে একটা ফিতা বেঁধে সেটা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলল; তারপর সে announce করত, 'আমি Macgyver'।

আরব বাচ্চারা ছিল বিচ্ছুর দল। বিদেশী বাচ্চাদের দেখলেই বেড়ে যেত ওদের মারামারি করার প্রবণতা। পাথর মারা ছিল তাদের বৈশিষ্ট; গাড়ির ছোট inidcator লাইট গুলা প্রায়ই ভাঙ্গা পাওয়া যেত - কারণ কোনো এক বাচ্চা পাথর ছুড়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। এক পর্যায় গিয়ে - সে এক পক্ষের 'অত্যাচার' সহ্য হলনা। একদিন, হুট করেই ফাহিমাদের বাসার সামনে পুরা রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল। ওদের বাড়িওয়ালা ছিল সৌদি, সেই বাড়িওয়ালার ছেলে তার দল বল নিয়ে পাথর আক্রমন শুরু করলো। শুরু হলো সৌদি বনাম বাঙালি বাচ্চাদের মারামারি। পাথর ছোরা থেকে শুরু করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া - কোনটাই বাদ থাকেনি। মারামারির সময় পুরা ধুলা উড়ে চারিদিকে তোলপার হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ যাবার পর আন্টি (ফাহিমার আম্মা) রান্না ঘরে কি করতে গিয়ে জানালা দিয়ে দেখে বাইরে ধুলা বালি উড়ে একাকার! বের হয়ে দেখে তুমুল মারামারি চলছে। সব মা'রা বের হয়ে যেই উঠানে আসল - অমনি সৌদিগুলো দিল দৌড়। আর আমরা মনে করলাম - বেশ এক কাজ করেছি! হাত পা ছিলে ফেরত এসে মনে হলো - এর চেয়ে বড় বীরত্ব জীবনে দেখায়নি! :P এই মারামারির পর confidence বেড়ে গিয়েছিল। এরপর আমাদের বাসার সামনে যখন দোলনা খেলতে গিয়ে ফিলিস্তিনি বাচ্চারা সেটা কেড়ে নিতে এসেছিল - তখন দোলনা দিয়েছিলাম ঠিকই - কিন্তু একদম ছুড়েই দিয়েছিলাম. আর সেই দোলনা গিয়ে লেগে গিয়েছিল ফিলিস্তিনি মেয়ের ঠোঁটে!


(To be continued...)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন