সমগ্র বাঙালি আন্ডা বাচ্চাগুলার কাছে ভয়ের কারণ ছিল আমার মা-র ইনজেকশন দেবার ক্ষমতা! বিশেষ করে খাওয়া নিয়ে ঘেনঘেন করলেই - আন্টিরা আমার মা'র নাম ধরে threat দিতেন। এই খাওয়া নিয়ে আমি নিজেও ভুক্তভোগী - জোর করে খেতে হত, না খেলে উপায় নেই (আমার ক্ষেত্রে যদিও ইনজেকশন প্রযোজ্য ছিলনা; চিকন সুচকে ভয় পেতামনা; আমার ক্ষেত্রে threat ছিল টিভি না দেখতে পারা!)। খেতে হবে - স্বাস্থ্য ভালো করতে হবে। রুচি কিংবা ক্ষুধা - কোনটাই কোনো পাত্তা পেতনা মা'র কাছে।
আমাদের বাসায় ময়লা ফেলার সিস্টেম ছিল সে সময়ের তুলনায় বেশ interesting। ফ্ল্যাট থেকে বেড় হয়েই, সিঁড়ির উল্টা দিকের একটা রুমে, দেয়ালের সাথে লাগানো একটা ড্রয়ার-এর মত ছিল। ঐ ড্রয়ার খুললেই - একটা লম্বা টানেল। টানেলটা বাসার একদম নিচতলায় গিয়ে একটা বড় ময়লার ট্রলিতে গিয়ে ঠেকত। উপর থেকে ঐ ড্রয়ার খুলে ময়লা ফেলে দিলেই - সেটা লাপাত্তা হয়ে যেত। তাই, খাবার সময় হাতের মুঠোয় খাবার নিয়ে ঐ ড্রয়ার পর্যন্ত যেতে পারলেই রক্ষা - চোখের নিমিষে খাবার শেষ! কিন্তু এই বুদ্ধি তখন রপ্ত করতে পারেনি আমাদের 'কুবরা'। কুবরা'রা ছিল তখন ৩ বোন। খাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি টেনশন করতেন আন্টি (কুবরার মা)। আন্টি খুব করে বলতেন 'আমার মেয়েদেরকে তো আমি খাওয়াতে পারিনা, ভাবী (মানে আমার মা) আমার বাচ্চাগুলাকে খাওয়া শিখিয়েছে!' এমনও দিন ছিল যখন বড় এক গামলায় খাবার নিয়ে মা সব আন্ডা বাচ্চা গুলাকে একসাথে খাওয়ায় দিত।ঠিক এরকম একদিন, মা খাওয়ায় যাচ্ছে আমাদের সবাইকে। কুবরা পটাপট খেয়ে ঘুরে ফেরত এসে আবার মুখে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের এক আগের লোকমাটাও তখনো মুখের ভিতর। মা তো বরই খুশি - কুবরার খাওয়ার উন্নতি দেখে। কুবরাও খুব খুশি - মা'র মুখে প্রশংসা শুনে।
রাত যখন ১১টা - সবাই যে যার বাসায় চলে গেছে। বাথরুমের বেসিনের কাছে গিয়ে দেখি - কমোডে খাবারের স্তূপ! কিচ্ছু বুঝার উঠার আগেই সজোরে চিত্কার করে আব্বাকে ডেকে নিয়ে আসলাম। খাবার কিভাবে ওখানে যাবে - সেটা তখনো মাথায় খেলার মত বুদ্ধি হয়নি। পরে খেয়াল করে দেখলাম ওখানে কিছু স্টিকারও পড়ে আছে (ঐদিন chewing-gum বিতরণ ছিল - আর সেটার সাথে থাকত স্টিকার)। এক একজনের ভাগে এক একরকম স্টিকার থাকায় - কুবরার স্টিকার কোনটা সেটা নির্ণয় করা কঠিন ছিলনা; ওর ঐদিনের খাওয়া দাওয়ার উন্নতির রহস্য ওখানেই শেষ হলো!
কুবরার আরেক বৈশিষ্ট ছিল - খাঁমচি দেওয়া! কোনো কিছু তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই জোরসে এক খাঁমচি দিয়ে দিত দৌড়। পরে তার এই বৈশিষ্ট উত্তরাধিকার সূত্রে তার সবচেয়ে ছোট বোনটা পেয়েছিল। ছোট বোন আর ফাহিমার ভাই ছিল একই বয়সের - কিন্তু ২জনের স্বাস্থ্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। কিন্তু স্বাস্থ্য আর গায়ের জোরের যেই সম্পর্ক - তা পুরাই ভুল প্রমানিত করে দিত ঐ খাঁমচির জোর। আর সেজন্য আন্টির কাছে নালিশ ও যেত কম না। তখন মা'দের মার খাওয়া মানে হচ্ছে সবার সামনে অপদস্ত হওয়া। তাই বকা/মার যাই হোক - ওটার সম্ভাবনা থাকলেই আমরা দিতাম উল্টা দিকে দৌড়। আর কুবরা? সেই দৃশ্য হত অন্যরকম. বকা/মার যেটাই সামনে আসুক না কেন, সে আরো ২ হাত দিয়ে জড়ায় ধরত আন্টিকে - আন্টিও তাকে পেত হাতের কাছে!
এখন কুবরা নিজেই একজন মা! থাকে দেশের বাইরে। তাই ওর সাথে ওর পিচ্চিটার কতটুক মিল তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা... কিন্তু পিচ্চির চোখে মুখে দুষ্টুমি আর মাথায় বুদ্ধি গিজগিজ করছে - ছবি দেখলেই বোঝা যায়। অপেক্ষা করছি কোনদিন সামনা সামনি দেখে বিশ্লেষণ করা যাবে...
(To be continued...)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন