রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৪

ক্ষমার প্রতিযোগিতা ...

২০১৪ সালে এসে বিশ্বজুড়ে মিডিয়াগুলো তোলপার হয়ে যাচ্ছে ইরানের মারয়িয়াম হসেন্জাদেহর নিজের ছেলের খুনীকে শুধুমাত্র চর মেরে, ক্ষমা করে ফাঁসির মঞ্চ থেকে নামিয়ে আনার দৃশ্য নিয়ে। 
আর ফেসবুকে সেটা শেয়ার হচ্ছে, মানুষকে চমক লাগিয়ে দিচ্ছে। 

নিজের প্রানের থেকেও প্রিয়, জীবনের সবটুকু দিয়ে বড় করা ছেলের খুনীকে ক্ষমা করে দিতে কতবড় দিলের অধিকারিনী হতে হয় তা মায়েরাই বুঝবে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে এরকম চমক শারিয়াহ বাস্তবায়িত অঞ্চলে প্রথম না আবার শেষও না। 

১৯৯২-৯৩ সালে সৌদির দক্ষিনাঞ্চলে যখন ছিলাম তখন আমাদের শহরের কাছেই এরকম এক খুনী কারাগারে ~১০ বছর ধরে প্রহর গুনছিলো কবে তারই হাতে খুন হওয়া লোকের ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হবে আর তখন সিদ্ধান্ত হবে তার ফাঁসি হবে নাকি না...
ওই বছর যখন ছেলে সিদ্ধান্ত দেবার মত বয়সে পৌঁছলো - ছেলে তার বাবার খুনীকে মাফ করে দিলো। 

আরেক ঘটনা বিবরণ এরকম ছিল যে এক মা তার ছেলের খুনীকে এই শর্তে ক্ষমা করে দিয়েছিল যে সে কোরআনের হাফেজ হয়ে যাবে। 

এখানে কোনভাবেই এক ক্ষমাকারীর অবস্থান অন্যজনের সাথে তুলনীয় না। বরং এক একজন এক এক দিক দিয়ে ভিন্নরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। 

এসব উধাহরণ যেসব দেশের নর্ম/কালচার সেই দেশ থেকে ফিরে এসে আমার দেশের আধুনিক সুশীল-সমাজের ধারক আর বাহকদের কাছ থেকে যখন শুনতে হত - 'এত ব্যাক ডেটেড আরবরা - সেই পুরানা আমলেই রয়ে গেছে', তখন মনে মনে ভাবতাম মন-মগজের দিয়ে আমরা নিজেরাই পেঁছনে থেকে অন্যদের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে হাসি আর সেই অজ্ঞতার জন্য আমাদের লজ্জাবোধও হয়না। 

দশক দশক ধরে চলে আসা সেই চমক লাগানো সভ্যতা আমাদের কাছে নতুন মনে হয়...

শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৪

A Tale of 2 Societies

২০০৭ সালে ক্লাসে ফিনান্সিয়াল ইনষ্টিটিউশন এন্ড মার্কেটস পড়ানোর সময় মহিউদ্দিন (MOA ) স্যার বলছিলেন ঢাকা আর ১০-১৫ বছরের মধ্যে দিল্লী, নিউ ইয়র্ক আর লন্ডনের মত হয়ে যাবে।এর মানে এই না যে - অর্থনৈতিক ভাবে আমরা ওদের কাছে পৌঁছব। দিল্লী আম-ইন্ডিয়ানদের কাছে যা, নিউ ইয়র্ক আম-আমেরিকানদের কাছে যা আর লন্ডন আম-ব্রিটিশদের কাছে যা, ঢাকাও আম-বাংলাদেশীদের কাছে তা হয়ে যাবে। লিভিং-কস্ট বেড়ে এমন পর্যায় চলে যাবে যে শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবিত্তরা এই সিটিতে খেয়ে-পড়ে, কোনো আর্থিক সমস্যা ছাড়া ভবিষ্যত গড়তে পারবে। বাকি সব ঢাকার বাহিরে চলে যেতে বাধ্য হবে। 

আজকে সিএনজি তে আসার সময় - সিএনজি ড্রাইভার বলছিল সে ঢাকায় এসেছিল ২০০১ সালে। তখন রুম ভাড়া দিত মাসে ৫০০ টাকা। এখন সেই একই রুমের ভাড়া বেড়ে হয়েছে ৩৭০০ টাকা। তারমানে তার শুধু বাসা ভাড়ায় খরচ বেড়েছে ৬৪০%। 
আয় সেই অনুপাতের ধারে কাছেও নাই। একটা মাত্র বাচ্চা। দেশের জমি-জমা সব বিক্রি করে চলে এসেছে। ফেরত যাবার মত জায়গা নাই। কিন্তু ঢাকায়ও বেশিদিন থাকতে পারবেনা। থাকার সব উপায় বন্ধ। যাবার উপায়ও বন্ধ। একই ধরনের সমস্যায় আছে আমাদের বাসার কাছের মাঝারি ধরনের দোকানের মালিকরা। তারাও দেশের বাড়িতে ফিরে যাবার চিন্তায় আছে। অফিসের থার্ড-পার্টি ক্লীনার তার পরিবারকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়িতে। 

এটা হচ্ছে একক/ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে এ শহরের মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের জীবন-জীবিকার সমস্যা। 

যদি আমরা একটু সামগ্রিক ভাবে চিন্তা করি। ইন্ডিয়া হোক, আমেরিকা হোক, ব্রিটেন হোক কিংবা মালয়েশিয়া হোক - সব দেশই তাদের অর্থনৈতিক/ব্যবসায়িক/প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোকে বিভিন্ন শহরে ভাগ করে দিয়েছে। ওই শহরগুলোর চারিপাশে আবার গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের আয়ের উত্স। এক দিকে, এক-দুটা শহরের উপর চাপ কমে গিয়েছে; অন্যদিকে যাদের সাধ্য নেই এসব অতি-খরচ ওয়ালা জায়গায় থাকতে, তারা অন্য জায়গায় গিয়ে নিজেদের জীবন পার করতে পারছে। 

আর আমাদের এ হতভাগা দেশ? ইনফ্রাস্ট্রাকচারেরই নাই খবর - আর অন্য শহর হবে হাব! এক সেতু নির্মানের কোটি কোটি টাকার প্ল্যান দুর্নীতির কারণে লাপাত্তা হয়ে যায়। টেন্ডারবাজিতে আর চাঁদাবাজিতে রিসোর্সের ৫০% এর উপরে নষ্ট হয়ে যায়।সিডর আর আয়লার জন্য আসা অর্থ-সামগ্রী গ্রামের প্রভাবশালী/ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের কাছে চলে যায় - যার ফলে ভিকটিমদের এখনো খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে আর তিনারা ১তলা থেকে ২তলায় উঠছেন; এদেশের গার্ডিয়ানদের অসীম অবদানের মধ্য দিয়ে তৈরী হচ্ছে একটা ভ্যাকুম - যা শক্ত হাতে ফিরিয়ে না আনলে একটা ক্যাটাসট্রফিতে পরিনত হবে খুব শীঘ্রই। আর এর ভিক্টিম হতে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। 

এদেশের ক্ষমতাবান আর উচ্চ/উচ্চ-মধ্যবিত্তদেরও একটু এলার্ম দিলে ভালো হত। সব চেতনা অন্তরে নিয়ে, মাথার চিন্তা বের করে - নিজেদের জগতকে যথেষ্ট মনে করে এগিয়ে যাচ্ছে। চলছে - চলবে। কতদিন এভাবে চলবে এটার কোনো চিন্তা থাকেনা। এখন আমরা যারা মনে করছি আমাদের নিজেদের আয়ের অনুপাত ঠিক আছে, তারা আরেকবার একটু চিন্তা করি। কয়দিন পর - কম দামে পাওয়া এসব মজুর, ড্রাইভার, মুদির দোকান আর গাউসিয়া যখন উঠে যেতে বাধ্য হবে, তখন আমরা কয়জন পারব সামাল দিতে? 

আর এরকম অসমতা যদি বাড়তেই থাকে - তাহলে চার্লস ডিকেন্স এর 'আ টেল অফ টু সিটিস' এর আম-জনতার যেই ক্ষোভ/জনরোষ তৈরী হতে টাইম লাগবেনা। যারা রিয়ালিটির সাথে পরিচিত, তারা বুঝবেন - সেই প্রসেস ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।সংখ্যার দিক দিয়ে উচ্চ/উচ্চ-মধ্য বিত্তরা খুবই কম। And Madame Defarge is getting ready.