বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৩

Is this a newspaper or 16pages of editorial?!

১/ গতকাল ডেইলি-ষ্টার এর একটা হেডলাইন ছিল 'IMF praises reform efforts: Bangladesh may get $140.5m credit in Dec'. পুরা রিপোর্ট জুড়ে কত সুন্দর কথা বার্তা। 

৬ প্যারাগ্রাফ পরে একটা মাত্র লাইন - 'The lender thinks Bangladesh’s GDP (gross domestic product) growth would slip below 6 percent this fiscal year'. 

বুঝলাম না - দেশের বেশিরভাগ মানুষ কি ঘাস খায়? কোন খবরের গুরুত্ব বেশি তা বুঝি আমরা জানিনা? একটা দেশের জিডিপি ৬ এর নিচে চলে যাচ্ছে, আর খবরের হেডলাইন হচ্ছে 'IMF praises reform efforts....'. তার উপর আবার '... may get $140.5m credit in Dec' - যা আইএমএফ এর আগে থেকেই দেবার কথা ছিল। 

এসব বিজ্ঞ সংবাদ মাধ্যম নিজেদের মনে করেন বুদ্ধিজীবী আর বাকি সব রামছাগল। 

[Financial Express এর হেডলাইন "IMF projects real GDP growth below 6.0pc; lauds progress in macroeconomic policies"] 

=======================

২/ গতকাল একই পেপার এর আরেক হেডলাইন - 'He never let us read his books - recalls Farooq Maududi' 
ছবিতে দেয়া টুপি পরা সেই ভদ্রলোক। যে বখে যাওয়া, যে বাপ দ্বারা বাসা থেকে ২বার বিতারিত, মা যার বিরুদ্ধে কোর্টে যেতে বাধ্য হয়েছে, আর ভাইবোন্ যার বিরুদ্ধে পাকিস্তান মিডিয়াতে বক্তব্য দিতে বাধ্য হয়েছে - তাকে দিয়ে এনারা বলাচ্ছেন ধর্ম আর রাজনীতির নীতি কি হওয়া উচিত। ঘাদানিক গোষ্ঠী কবে থেকে ধর্মীয় রাজনীতির এক্সপার্ট হলো? 

এনারা হয়তো জানেন না - আবুল আলা মউদুদী কে, বিশ্বে তার পরিচিতি কি রকম আর তার চিন্তাধারার লেভেল কোন জায়গায়। 
প্লেগ্রুপে পড়া অবস্থায় পিএইচডি অধ্যায়নরতদের নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন তারা। 

গুগল এর দুনিয়া - সার্চ দিলেই মানুষ জানতে পারে অনেক কিছু।কিন্তু তবুও তারা ভাবে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ কিছু জানেনা। আর ঘাদানিক গোষ্ঠির মুখপাত্র এই মুহুর্তে এদেশে তারাই হবে - যারা জনগনকে ভাবে রামছাগল। 

=======================

৩/ আজকে সকাল পর্যন্ত একই পেপার এ হেডলাইন ছিল, 'Explosion rocks ....' 
সকাল যেতে না যেতে সেটা হয়ে গেল 'Over 30 grenades stored there'. নিচে ছোট করে লেখা 'says police'. 

আবার একটা ছবিও দিয়েছে - যেখানে মফস্সল-গ্রামাঞ্চলের ছেলেদের খুবই প্রিয় খেলনা, মার্বেলের, ছবি দেয়া। ক্যাপশন এ দেয়া - সেটাও নাকি বম্ব বানানোর উপকরণ। 

এদেশের মানুষ বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র হওয়াটা এই মূহুর্তে একমাত্র তারাই পারবে - যারা সারা দেশের সব মানুষকে রামছাগল ভাবে। 

কিন্তু আমার প্রশ্ন একটাই: এপ্রিল-মে মাসের ধর্মীয় গোষ্ঠির সমাগম/জাগরণ ভুলে যাওয়া - এটা কি রামছাগলের লক্ষণ নাকি গোল্ডফিশের লক্ষণ? 

----------------

Give away everything - the land, the borders, the forests, the water that is flowing, the garments that were flourishing. And now - the image that it was holding. You may buy the foreign minds with that. 

But never ever think you are going to sell the minds of the people of this country. 

Unless of course if you think we are all রামছাগল!

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...৪

4.

সাদা লুজ শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল মেয়েটি। বয়স ২৪-৩০ এর মধ্যে। চুলগুলো কোনোমতে একটা ঝুটি বেঁধে ছুটছে। একটা পা অচল - তারপরও ক্রাচে ভর করে এক লেকচার হল থেকে অন্য হলে ছুটে যাচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে ইচ্ছা হচ্ছিল - আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে দেখি। সে এক অন্যরকম ফিলিং। এত্তখানি কষ্ট করে - মেয়েটি কনভেনশনে হাজির হয়েছে হয়েছে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম/এপ্লিকেশনের কথাগুলো শুনতে। 

ইসনা (ISNA - Islamic Society of North America) কনভেনশনে এমন কিছু দেখেছি - যা আমাকে ইসলামের মানবিক গুনাবলীগুলো নিয়ে আবার চিন্তা করতে শিখাচ্ছে। এখনো ওই দিনগুলো নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে, এমনকিছু হটাত মনে পরে - যা আবার নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়। আর মনে হয় দেশে আমরা যারা ইসলাম মানতে চাই (বা ইসলামের কথা বলি), তাদের আরো কতকিছু শেখার বাকি আছে। 

সামাজিক কিছু ব্যাধি আমাদের দেশের মানুষের ভেতর রয়ে গিয়েছে - জনম কা জনম (জেনেরালি স্পিকিং); সেটা থেকে ইসলামী-ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী এই আমরাও সেটার মূল উত্পাটন করতে পারিনি। ওই ক্রাচে ভর করা মেয়েটিকে আপাত দৃষ্টিতে দেখে আমাদের দেশের বেশিরভাগের একটা জাজমেন্ট আসত। 'জিন্স পরে আসছে মেয়েটা'... 'মাথায় একটু কাপড় দিলেও তো পারত - আল্লাহর নাম নেয়া হচ্ছে '... কিন্তু একারণে কত উত্সুক মানুষ যে দূরে ছিটকে যায় - তার হিসেব নেই।আমরা বেশিরভাগ ভাবিনা - সেই মেয়েটাকে দেখে আল্লাহর কুরআনের ওই আয়াত মনে পড়তে পারত, যেখানে আল্লাহ বলছেন - 'তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে চল, যার সীমানা হছে আসমান ও জমিন, যা তৈরী হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য' (সুরা আল-ইমরান, ১৩৩). হতে পারে ক্রাচে ভর করেই সে এই রেসে অনেকের আগে চলে যেতে পারে।

আরে, তাকওয়ার মাপ কি আল্লাহ আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন? [শুধু একটা উদাহরণ নেই - হিজাব করে যেই সওয়াব আয় করছি, তা এক গিবত দিয়ে যে উড়িয়ে দেই - আল্লাহর স্কোরিং এ আমাদের নেট স্কোর কত হয় তখন?] 

ওখানে একই জায়গায় বসে আছে - নিকাবি, হিজাবি, হিজাব-ছাড়া লুজ কাপড় পরা মেয়েরা; আবার টাইট জিন্স পরা মহিলাও। উদ্দেশ্য একই - একটু যদি শিখতে পারি। ওই দেশে যারা ইসলাম প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের মেন্টাল ম্যাচিউরিটি অনেক বেশি। সেটা ওখানকার প্রতিটা লেকচারে রিফ্লেক্ট হয়েছে। আগ্রহকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে ওস্তাদ। সব শুনে মনে হয়েছে - এদেশে একটা ম্যাস ট্রেনিং করতে হবে আমাদের নিয়ে। টপিক হবে -'হাউ টু এম্পাথায়জ উইথ ইউর পিপল'. 

এই এম্পাথী না থাকলে - ওই মেয়েটি ক্রাচে ভর করে লেকচার শুনতে আসতনা; আমার ঠিক পাশের সিটে বসা - সোনালী চুলের, সুট পরা, নেল পলিশ করা, Prada ব্র্যান্ডের ব্যাগ নিয়ে আসা গ্ল্যামারাস কর্পোরেট ভদ্রমহিলা, সে ইয়াসমীন মোগাহেদের লেকচার শুনে সাদা রুমাল দিয়ে চোখের পানি মুছ্তনা। হুইলচেয়ারে করে বয়স্ক ভদ্রলোক নতুন করে ইসলাম শিখতে আসতনা। আর না বয়স্ক এবং টিনেজার একটি টপিকে মন বসাতে পারত। তাও আবার আমেরিকার মত জায়গাতে।

মুহাম্মদ (স) এর পার্সোনালিটির উধাহরণগুলো কতই না সুন্দর করে উপস্থাপন করছে। 

Living the values - not talking the values.....and so unlike us! 
May He Guide us all....

[contd...]

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...৩

3. 

প্লেন যখন ল্যান্ড করতে থাকে - যেকোনো শহর/এলাকার একটা বার্ডস-আই-ভিউ পাওয়া যায়। ১৯৯০ -৯৪ সাল পর্যন্ত ঢাকায় যখন প্লেন ল্যান্ড করত, তখন উপর থেকে অনেক সবুজ দেখা যেত - মাঝে মাঝে পানির প্রবাহ। কিছুদুর পর পর ঘন বসতি। দেখলেই চোখটা জুড়িয়ে যেত। আর ঠিক ২০ বছরের মধ্যে সেই দৃশ্য পুরা পাল্টে গিয়েছে; এখন ল্যান্ড করার সময় মনে হয় - একগুচ্ছ কংক্রিট নিয়ে কেও মুড়ির টিনের ভেতর ঝাকুনি দিয়ে ছুড়ে ফেলেছে। না আছে সবুজ, না কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আঁকা যায়। 

জে, এফ, কে এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করার আগে উপর থেকে দেখে মনে হয় কিছু জ্যামিতিক-আকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেমন যেন গোছালো জ্যামাতিক সমষ্ঠি - তার মাঝে মাঝে সবুজ রেখা। মনে হচ্ছে এক অদৃশ্য ফ্রেম শহরের প্রতিটা ভাগকে আলাদা করে সিকুএন্স করে রেখেছে। যেমন ভিউ তেমন বাস্তব চিত্র। শহরের এক ল্যাম্প-পোস্ট থেকে শুরু করে ব্রিজ পর্যন্ত - সব একদম প্ল্যান্ড। কয়টা বাড়ি, কোথায় পার্ক, কোথায় অফিস, কয়টা কারখানা - সব লং টার্ম চিন্তা করে প্ল্যান হয়েছিল। অনেকে হয়ত ভাববে - উন্নত দেশ আর উন্নয়নশীল দেশের ভেতর পার্থক্য থাকবেই। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই শহরের প্ল্যানতো আর এখন হয়নি। শত বছরের কাঠামো এখনো দাড়িয়ে আছে ওখানে। আর ওটাকে ঘিরেই তৈরী হয়েছে নতুনগুলো। 
সো - ইটস আ ম্যাটার অফ মায়্যান্ডসেট। 

তাই অলৌকিকভাবে আজ থেকে যদি এদেশের নেতা/নেত্রীরা সেরকম সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেন - কয় বছর পর সেরকম জ্যামাতিক আকৃতির ভিউ দেখা যাবে ল্যান্ডিং এর সময় - আল্লাহ মালুম।

কয় বছর আগে - বুএটের আরবান প্ল্যানিং নিয়ে পড়াশোনা করা একজন বলছিল, ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক এক্সপার্ট অনেক কাজ করেছেন ঢাকা প্ল্যানিং এর উপর। লিখিত আকারে পরামর্শও দিয়েছেন এই দেশের উপর-ওয়ালাদের। আজ পর্যন্ত কাজে দেয়নাই। এর ফল হচ্ছে - ঢাকা এমন পর্যায় চলে যাচ্ছে যে একটা নিরাপদ, বাসযোগ্য শহর করতে পুরাটা মুছে আবার গড়তে হবে। জ্যামাতিক আকৃতিতো অনেক পরে। আর্থকোএক-প্রণ পাতালের উপর এই নাজুক প্ল্যানিং। দেশপ্রেমিক ভর্তি এক দেশ। 

আমেরিকাতে ঢোল বাজিয়ে কেও কাউকে বলছেনা - যে সে দেশপ্রেমিক। সমষ্ঠিগত ভাবে দেশের জন্য কাজ হচ্ছে প্রতিটা জিনিসের অধিকারের উপর নজর দিয়ে (জেনেরালি স্পীকিং); হতে পারে সেটা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, কিন্তু মজ্জাগত হয়ে গেছে অভ্যাস। একটা শহর কিভাবে গঠন হবে - তা নিয়ে চিন্তা হয়েছে একশত বছর আগে। এই দেশপ্রেম হয়তো তাদেরকে অনেকটা সেল্ফ-সেন্ট্রিক করে ফেলছে (যা নিজেদের দেশের জন্য ভালো দেখাবে তাই করতে রাজি তারা); কিন্তু ফলাফল তারা ভোগও করে যাচ্ছে। 

তাই আজকে দেশে যখন খুঁজে বেড়াচ্ছি বাচ্চার খেলার জন্য একটা মাঠ, আর দূষণমুক্ত বাতাস - ওই দেশের বাচ্চাগুলার এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, তা ভাবতেই পারেনা। আর এই প্রজন্মকে দেশের ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে দেখলে - আমাদের কোয়ালিটি কথায় থাকবে? 

সেই চিন্তা আমেরিকানরা আরো ১০০+ বছর আগে করে গিয়েছে। আর আমরা করছি পোস্টারিং। 

[Contd...]

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...২

2. 

নিউ ইয়র্ক এর কিছু জায়গা আছে - যা বিভিন্ন কমিউনিটি দিয়ে অধ্যুষিত। 

জ্যাক্সন হাইটস এ গেলে বোঝার উপায় নাই, এটা আমেরিকার একটি অংশ। বাংলা অক্ষরে দোকানের নাম থেকে শুরু করে - দরজার উপর ভোটাভোটির পোস্টার; এমনকি জুমা'র খুতবা দিচ্ছে বাংলায়! দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সাতকরা আর জাম্বুরা। 

চার্চ এভেনিউতে চায়না টাউন। সবকিছু চাইনিজ। গ্রসারি সপে পাওয়া যায় কচ্ছপ আর স্কুইড। অবশ্য চায়না টাউন একটা ইউনিভার্সাল কনসেপ্ট। সব দেশেই থাকে। ব্রুকলিন এ 78th street - আরব স্ট্রিট। ওখানে গেলে রাস্তা ঘাটে আরবী ভাষায় কনভার্সেশন শোনা যাচ্ছে। কাউকে দেখেই বোঝা যায় আরব, আর কেও পুরাই পশ্চিমা বেশে। দোকানে বাকলাভা আর পনিরের বাহার, আতর, বোরখা...

আরব স্ট্রিটের এক দোকানে আমি আর আব্বা (শশুর-আব্বা) গিয়েছিলাম। দোকানদার ২ জনই মহিলা। ২জনই কালো বোরখা পড়া। একজনের চেহারা নিকাব দিয়ে ঢাকা। যেই জিনিসটা আমরা নিব - নিকাবী ভদ্রমহিলা সেটার দাম ৫ ডলার কম বলল। হিসাবে ভুলের কথা তুললে, সে বলল, 'That's because you wear the niqab'. মনটা অজান্তেই এত ভালো হয়ে গেল - বলার মত না। মনে হলো এইত আমরা একই গ্যাং এর ! এখানে শেষ না - যখন চেঞ্জ ফেরত দিল - ১০ ডলার বেশি ফেরত দিল। বলল, 'This is for you, sweetheart'!! 

কি বলব বুঝে পেলাম না - ধন্যবাদ দেয়া ছাড়া। জিগ্যেস করলো - 'Is that your father?' আমি বললাম, 'Father-in-law'. আব্বা তখন আবার বললেন, 'I have only one son'. মহিলা সাথে সাথে উত্তর দিল, 'Masha Allah. And I pray you have 7 grandsons'! 
হাসি খুব কষ্টে আটকে রাখলাম। কারণ জানতাম, আরবদের কাছে এটাই বড় দু'আ। 

ভাষা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম মিশরীও অরিজিন। ঠিক ওই সময়টাতে মিশরে চলছিল ধর্মীয় লোকদের নিধন অভিযান। সেই মানুষগুলোর সাথে রিলেট করতে সময় লাগলনা। আল্লাহ যেন এসব পরিষ্কার মনের মানুষগুলোকে রাহম করেন। 

কস্টকো-র ঘটনা যেই খারাপ স্ট্যাম্প মাথায় ছিল - ওটা কিছুটা হলেও হালকা হলো। 
[contd..]

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...১


আমেরিকা দেশটা একটা সালাদ বউল, তারমধ্যে নিউ ইয়র্ক আরো বেশি। কে আমেরিকান আর কে না বোঝা মুশকিল; সাবওয়ে ট্রেন গুলাতে উঠলে বোঝা যেত দেশটা একই সময় চীন, ইন্ডিয়া, পেরু এবং এরাবিয়ার লোক দিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। টুরিস্ট ছাড়া সব আমেরিকান। বলা হয় 'ইটস ল্যান্ড অফ অপর্টিযুনিটি'....তাই পৃথিবীর সব কোন থেকে মানুষ ছুটছে সেই দেশে। বলা হয় 'ইটস এন ওপেন সোসাইটি' - সবার জন্য খোলা। 

আম্মারকে নিয়ে খোলা জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার মানে ছিল একটা ম্যারাথন। খোলা জায়গা মানেই তার কাছে খেলার মাঠ। আর শপিং সেন্টার হলে তো কথায় নেই - খেলার মাঠ, সাথে ফ্রি হাতের নাগালে টেনে নামানোর জিনিস। পিছু নিতে ২ জন আর দৌড়াতে লাগত ১ জন। কারো শপিং কার্টের সামনে আর কারো চলার পথে গিয়ে থেমে যেত। আর বারবার সরি বলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল।

ওখানে কিছু শপিং ব্র্যান্ড আছে - যেগুলো প্রতিটা স্টেট এই দেখা যাবে। এক একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এরকম নামকরা ৬-৭ টা শপিং ব্র্যান্ড একসাথে করে রেখেছে তারা। এরকম একটা ব্র্যান্ড হচ্ছে কস্টকো। কস্টকোর বৈশিষ্ঠ একটু ভিন্ন - কিনলে হোলসেলে কিনতে হবে। সাবান কিনতে গেলে - ১৬ টার কমে না। বাচ্চাদের ডায়াপার কিনতে গেলে - একবারে ৮০টার প্যাকেট। চকলেটের এক প্যাকেটে ২০০টা। সস্তা পরে দেখে অনেকেই যায় - কযেক সপ্তাহের বাজার করে আনার জন্য। হাইলি কমার্শিয়াল এক দেশ - ক্রেতারও কমতি নেই। হাতের নাগালে সবকিছু দিয়ে দেওয়া। ভ্যারাইটি এবং চয়েস এর বাহার সবকিছুতেই। সারা সপ্তাহ ধরে ৮-১২ ঘন্টা করে খাটতে হবে - প্রতিদিনের জীবনে সেই খাটুনির ফল পায় এসব চয়েসের মধ্য দিয়ে। 

সেদিন কস্টকোর আইলের ভেতর আম্মারকে খুঁজে বের করে যেই কোলে ওঠাতে যাব - এক বয়স্ক মহিলার সামনে গিয়ে সে দাড়িয়ে গেল। সাথে সাথে 'সরি' বলে ওকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম - মহিলা তখন আমাকে কন্ফ্রণটিঙ ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো - 'Why do you wear that on your face?' [নীকাব দেখে বলল]

প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলাম। সাথে সাথে মনে হলো - জিজ্ঞেস করতেই পারে; কারণ শুধুমাত্র হিজাব পরে এরকম মহিলার সংখ্যাই কম।

বললাম, 'It's because of my religious belief'

তখন সে বেশ রুক্ষভাবে বলল, 'It is NOT your religious belief. I know it's NOT your religious belief. Your religion doesn't ask you to do that'

বুঝতে বাকি রইলোনা - সে জানার জন্য আমাকে প্রশ্ন করছেনা।

আমার ননদের দিকে দেখিয়ে বলল (সে হিজাব পরে) - 'She doesn't put that thing on her face. Why don't you just cover like that?'

ধৈর্য ধরে উত্তর দিলাম, 'It's a choice. You have the choice to pick which you would prefer. There are several interpretations to pick from'.

সে তখন আরো উচ্চ গলায় বলল, 'Don't give me that. I have studied your religion. Do you know why I think you do that? I think it's because you are a terrorist.' 

:-|কি আশ্চর্য!

এর আগে অফিসের কাজের কারণে Scandinavian লোকজনের সাথে মিশেছি। মিশে মনে হয়েছিল - ওদের কাছে 'নিকাব' কোনো সময় - individual choice of an independent woman - মনে হয়না। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাবে যখন বুঝিয়েছি এটাই আমার ইচ্ছা - my choice - তখন তারা সেই choice কে শ্রদ্ধা দেখিয়েছে। ধর্মের এই বিধানের অন্তর্নিহিত কারণ জানতে চেয়েছে।

কিন্তু এই মহিলা ছিল ভিন্ন। সে ক্ষোভে ফেটে পরছিল - এই আমি এই রকমের পোশাকে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছি, সেটাই সহ্য হচ্ছিলনা।

আমি তারপরও ঠান্ডা মাথায় বললাম, 'Not a single terrorism act in recent years inside US was done by people who cover their faces, was it?'

সে তখন আরো ক্ষেপে গেল। বলল, 'How do I know what your face looks like? You wouldn't show your face to me, would you? Because you are one.'.

মহিলাকে যখন তাও দেখালাম, সে একটু থেমে আবার বলল - 'But I still think you are a terrorist'.
মহিলা চলে গেল।

বেশ! আমার নিকাব না, আমার চেহারাও এখন 'terrorist' !

এমনও হয়েছে - ঠোঁটে সিগারেট, হাত-পায়ে টেট্টু এবং ভ্রুর উপর পিয়ার্স করা মহিলা বের হয়ে যাবার সময় আমার জন্য শপিং সেন্টারের দরজা ধরে রেখেছে যাতে বাচ্চাসহ সহজে বের হতে পারি। আবার কারো মুখের উপর অন্য কাউকে 'terrorist' গালি দিতেও বাঁধেনা। 

An open society, alright. Openness with some ‘if-s’ and ‘but-s’. 

(Contd...)

সোমবার, ১৩ মে, ২০১৩

Mothers' Day 2013


It was all chaotic around me. I was standing there, trying to understand what was going on. Dust and darkness outside; numbness inside me. I was looking for something in that darkness. A very special someone. Everyone was there - at home- safe and sound. But someone special was missing. Then they came in with the news. My son had been found. Dead. My son, my loving son.

I tried to imagine what he would look like - wrapped in a white cloth. Only the face would have been left uncovered. He was lying there with closed eyes and a calm face. With olive skin, thin face and a sharp nose - it was my son. It wasn't Ammar. But it was my son.

I wasn't crying. I wasn't wailing. I was just asking where his body was. I just wanted to see his body. 'He has been buried already' - came the reply.
 
That was the last straw. That's when my heart was torn to bits. I screamed again and again - I wanted to see my son. For one last time. 'Please'. I was pleading again and again.
 
That us when I woke up. It was a nightmare I had awaken from. I was empty. I realize now -I have the privilege to wake up to reality. So many mothers don't. They will wake up to the nightmare everyday for the rest of their lives.
I have been scarred for life. I am now prejudiced for good.
Oh Lord, the One who has given all mothers the highest of status, please make these mothers meet their sons in the best of places, in the highest of heavens in the Hereafter. In a life which will last forever and ever. Ameen!






বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

হাশিম আমলা আর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ

'গণজাগরণ মঞ্চের প্রবর্তক' দের 'ইসলাম' প্রীতি বাড়ছে দেখে ভালই লাগে। তবে তাদের ইসলাম প্রীতি প্রমান করতে গিয়ে - যেই উদার মানসিকতার দরকার, তা কোনো ভাবেই প্রমান করতে পারছেন না।

আজকে ওনারা হাশিম আমলাকে টেনে নিয়ে এসেছেন। হাশিম আমলার পরিচয় এবং ধর্মের জন্য যে ত্যাগ - তাতে নিশ্চই আমাদেরকে নতুন করে শেখানোর কিছু নেই। কিন্তু এই নব্য 'ইসলাম' প্রিয় মানুষেরা আমাদেরকে নতুন করে হাশিম আমলাকে চেনাতে এসেছেন।

ওনাদের ধারা ভাষ্যর এক জায়গায় লেখা - 'গতকালকের ওয়ান ডে খেলায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান কে পরাস্ত করবার সময় দেশপ্রেমিক হাশিম আমলার ব্যাট যেন হয়ে উঠেছিল তরবারী।' ভাবখানা এমন - যেন 'ইসলামী প্রজাতন্ত্র' আর 'দেশ প্রেমিক' শব্দ ২টি - opponents.
একজনের সাথে আরেকজন ব্যাট না নিয়ে - যেন তরবারি নিয়ে নেমেছে। I am sure Amla is a sportsman!

হাশিম আমলার বিশ্বাসের ভিতরে শুধু দেশ প্রেম আছে? 'ইসলামী প্রজাতন্ত্রের' যেই values, আপনারা বলতে চাচ্ছেন তা নেই? কথা এমন ভাবে প্রকাশ করছেন যেন - 'ইসলামী প্রজাতন্ত্রের' বিরুদ্ধে একজন মুসলিম একজন ইহুদির সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধ করছে ! আচ্ছা - হাশিম আমলাকে যদি তাদের এই লেখার ধরন দেখানো হয় - তখন কি হবে?

এমন উদার মানসিকতার ওনারা - খেলাকেও ছাড়েননা।

ধারাভাষ্য এখানেই শেষ না। অধিনায়ক ডি ভিল্লিয়ের্স এর সাথে আলিন্গন্রত ছবি দেখিয়ে বলছেন ওনারা - দি ভিল্লিয়ার্স একজন ইহুদি। আবার বলছেন 'আমাদের দেশের হিসেবে একজন নাসারা।----- আইকন মুসলিমের আলিঙ্গনে একজন নাসারা - সহযোদ্ধা' (ওনারা জানেন না - নাসারা বলা হয় খৃষ্ঠান ধর্মালম্বীদের; ইহুদিদের বলে -'ইয়াহুদ।' এটাই হচ্ছে ওনাদের ইসলামী এবং আরবী জ্ঞান এর দৌড়।) মানেটা কি? এনারা কি বলতে চাচ্ছেন? নিজেদের অসহিষ্ণু চিন্তাধারার ধরন দেশের আর সব মানুষ লালন করে? এরকম ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশটাকে কি বানাতে চাচ্ছেন তারা? আরে - ইসলামী দলগুলো এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর আগে - তারাই তা বানাচ্ছেন। নিজেরা ভালো চিন্তা লালন করতে পারেন না - তাই বলে পুরা দেশের আমজনতাকে তাদের চিন্তার থলের ভেতরে ভরার অধিকার কে দিয়েছে তাদেরকে? ধর্মীয় চিন্তাধারাকে তারা সহ্য করতে পারবেন না, ধর্মীয় সম্প্রীতিকে আঘাত দিয়ে ভেঙ্গে দিতে চাইবেন; আবার একজন ধার্মিক লোকের values কে নিজেদের চিন্তাধারার ধাঁচে ফেলে, সেটার অপব্যাখ্যা করছেন। I am sure Hashim Amla doesn’t have shallow knowledge about Islam like they do.

নব্য 'ইসলাম' প্রেমীদের বলছি -

আপনাদের মনে নেই - এই সেই সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট টীম - যারা ডিন জোন্সকে চাকুরিচ্যুত করাতে বাধ্য করেছিল যখন সে আমলাকে দাড়ির জন্য 'সন্ত্রাসী' বলে মন্তব্য করেছিল? এবং সেই টিমেরই অধিনায়ক এই - ডি ভিল্লিয়ার্স। এটাই হচ্ছে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা। পরস্পরের ধর্মীয় সহিষ্ণুতা। আপনারা যে হারে ইসলামের পক্ষের মানুষদের 'ছাগু', 'রাজাকার', 'ধর্মান্ধ' বলে গালি দেন - আপনারা ডি ভিল্লিয়ার্স এর টিমে স্থান পাবেন না; পাবেন - ডিন জোনস এর টিমে। আর আপনাদেরকে ডি ভিল্লিয়ার্সের সাউথ আফ্রিকান টিম চাকুরিচ্যুত করতে বাধ্য করবে।

আরেকটা কথা মনে রাখবেন - হাশিম আমলা শুধু নিলসেন ম্যান্ডেলার সাউথ আফ্রিকার খেলওয়ার নন। সে আহমেদ দিদাতের সাউথ আফ্রিকারও খেলওয়ার।
এই ২এর সমীকরণ আপনারা বুঝবেন না। বোঝার ক্ষমতা হবার আগে ইসলাম নিয়ে ধান্দাবাজি বাদ দেন।

রবিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

আদিলের দৌড়

৮-৯ বছর আগের কথা। আদিল তখন ক্লাস ৭-এ। সে ছিল গ্রামের সবচাইতে দুষ্টু বাচ্চাগুলোর একজন। কেও তার সাথে গাছ বাইতে সাহস করত না - কারণ সবচেয়ে উঁচু গাছ সে বেয়ে উঠত। সাতারে কেও তাকে হাঁরাতে পারত না। ক্লাসেও ছিল তুখোর। মা'র বকুনি দেবার চান্সটাও থাকতনা - শুধু দৌড় আর দৌড়। ২ পা যেন দিক্বেদিক ছুটেই চলছে। তার দৌড় যেন সবকিছু নিয়ে - একটু বেশি তারাহুরা সবকিছুতে।

সেদিন সে দেখছিল বাসার চালের ঠিক উপরে আম ঝুলছে; মাত্র আম ধরা শুরু হয়েছে। ব্যস - উঠলো সেই ডালে। যে ছেলের কাছে নারিকেল গাছ বেয়ে উঠা ব্যাপার না - সেই ছেলেই ঐদিন পিছলে গেল ছোট একটা ডাল বেয়ে উঠতে গিয়ে। আর ওখানেই শেষ হয়ে গেল তার দৌড় - সেই তড়িত গতির ২পায়ের দৌড়। ব্যাথায় চিত্কার করতে লাগলো। সদরের ডাক্তার বুঝলো আদিলকে সে কোনো উপকার করতে পারবেনা। চঞ্চল সেই আদিলকে নিয়ে আসা হলো ঢাকায়। এক্স, রে, করে দেখা গেল - মেরুদন্ডের নিচের দিকটা একেবারে টুকরো হয়ে গেছে। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। শুধুমাত্র তাকে বাচানোর জন্য। হুট করে দরকার হলো রক্তের। ভাগ্যের জোরে আমার রক্তের সাথেই মিলে গেল সবকিছু তে। জীবনের প্রথম রক্ত দেয়া - চঞ্চল আদিলের জন্য। ও বেঁচে গেল - কিন্তু চিরতরে সেই হারিয়ে ফেলেছিল তার দুরন্ত পায়ের সব জোর। আল্লাহই জানেন এর মধ্যেও নিশ্চই কোনো উপকার আছে তার জন্য।

তার ছোট্ট ভাইকে সেবার সে বলল – ‘ও আমার ভাইটা , তোর পা ২টা আমাকে দিবি? আমি কথা দিচ্ছি সারা জীবন তোকে আমি কোলে নিয়ে বেড়াব’।
যেই মা অতিষ্ট হয়ে যেত আদিলের চঞ্চলতায় - সে বাকরুদ্ধ।

সি,আর,পি, তে থাকলো কিছুদিন - নিজের উপর নির্ভর করতে শিখল, হাতের কাজ তার বাড়তে লাগলো। গ্রামে ফিরে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে সে হয়ে গেল - শো পিস। সবাই দেখতে আসল তাকে - কিভাবে সে হাত দিয়ে সব কাজ করছে, আর পা ২টা নিস্তেজ হয়ে আছে। ক্লাসে যেতে গেলে - রাস্তা দিয়ে সবাই তার পিছে যাওয়া শুরু করলো। self-prestigious তার মন আর মানলনা - ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দিল। বাসায় বসে একটু আধটু পড়ল। আসতে আসতে দিন গড়িয়ে তার সহপাঠীরা ক্লাস ১০ এ উঠলো। মেট্রিক পরীক্ষা দিতে গেল। তার কাছে অঙ্ক আর ইংলিশ পড়তে আসা ছাত্রগুলো খুব ভালো রেজাল্ট করলো। সে বসে রইলো বাসায় তার খাটের উপর।

পরিবারেরই অনেকে চিন্তা করতে লাগলো - কার উপর তার নির্ভর করে থাকতে হবে সারা জীবন? কে তার দায়িত্ব নিবে? তার খরচের ভার কে সামলাবে? উটকো ঝামেলা কে পোহাবে? সামনা সামনি বলতেও অনেকে দীধা বোধ করলোনা। ওই সময় - বেড়াতে যাওয়া হয়েছিল গ্রামে। তখন খুব করে বুঝিয়েছিলাম আমি আর আমাদের এক ভাবী মিলে।

আসতে আসতে তার মনের জোর একটু ফিরতে শুরু করেছে। নিজ থেকে খুঁজে বের করেছে রাজশাহীর এক প্রতিষ্ঠান - যেখানে পক্ষাঘাতগ্রস্থদের নিয়ে একটা স্কুল আছে। এখন সে সেখানে নিজেই থাকছে। আর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে - তার সেই অদম্য চঞ্চলতাকে ফিরিয়ে আনতে।
===============================

আদিল এবার মেট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছে - তার সেই ছোট্ট ভাইটার সাথে। টেস্টে গোল্ডেন-এ পেয়েছে।
এই মাত্র ফোন করে জানালো -বাংলা পরীক্ষা দিয়ে এসেছে।

এই ভাইটার জন্য সবার কাছে দো'আ চাচ্ছি। আল্লাহ কার হাতকে কবুল করবেন - একমাত্র তিনি জানেন!

শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩

নিভৃতে

গত পরশু মা তার সিনিয়র (বেশ নামকরা একজন ডাক্তার) এক আন্টির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তাঁর ধানমন্ডির ক্লিনিকে। গতকাল ডাইনিং টেবিলে বসে যখন আম্মার দুষ্টমি করছিল - তখন মা সেটা দেখছিল আর বলছিল, 'একজন ৭টা বাচ্চা নষ্ট করেছে'!

'৭টা'?

মা পরে ধীরে ধীরে বলল - ক্লিনিকে যখন দেখা করতে গিয়েছিল, তখন এক মহিলা এসেছে আন্টির কাছে। তার নাকি বাচ্চা হচ্ছেনা। হিস্ট্রি নিয়ে জানা গেল - সেই এর আগে ৩টা বাচ্চাকে মেরে ফেলছে জন্মের আগেই। যেটাকে ডাক্তারি টার্মে বেশ 'ভদ্র' ভাষায় বলে 'এম,আর'।বাচ্চার টাইমিং ঠিক নাই। 'বাচ্চা ভুল সময় দুনিয়াতে আসতে চেয়েছিল' - তাই ৩টাকে ধরে পর পর ফেলে দিল। মা শুনে যখন কিছু বলতে গিয়েছিল, তখন আন্টির এসিস্টেন্ট বললেন, 'আপা, কালকে একজন আসছিল - ৭টা বাচ্চা নষ্ট করসে। এখন আর বাচ্চা হয়্না দেখে চিকিত্সা করতে আসছে'!

৭টা বাচ্চা ফেলে দিয়েছে। এদের কাছ থেকে শুনে মনে হবে - সেই unborn বাচ্চাগুলো হচ্ছে আবর্জনা।' টাইমিং ঠিক নাই। খরচ বাড়াবে। পড়াশোনায়/কাজে উটকো ঝামেলা পাকাবে। So - just get rid of them'. দেখে অবাক লাগে - এরাও নাকি মা?! আর সবকিছু বাদ দেই।সব ধরনের নাড়ির সম্পর্ক বাদ দেই। শুধু একটা fact যদি মাথায় নেই - আর সেটা হচ্ছে, এই বাচ্চাগুলোর তো জান ছিল।মানে এরা তো জীবিত ছিল। এদেরও তো এক পর্যায় গিয়ে খারাপ/ভালো লাগার অনুভূতি থাকে।এরাও তো ব্যথা পায়। হ্যা, জন্মের আগেই। আর দুনিয়াতে এসব নিষ্পাপ বাচ্চার আসার অধিকার যখন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে অন্য এক মানুষ তখন কি পরিমান নির্মম, নৃসংশ এক অবস্থায় সে বিদায় নিচ্ছে 'মা' নামের সেই মানুষের ভিতরে থাকা অবস্থাতেই।
আর এতগুলো বাচ্চা দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার পর - এখন নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বাচ্চা নেবার চেষ্টা চলছে।

মা-র গর্ভের ভিতরটা হচ্ছে একটা লাইফ-সাপোর্ট এর মত। খাবার, শ্বাস-প্রশ্বাস - সবকিছুর জন্য সেই বাচ্চা ওই গর্ভের উপর নির্ভরশীল।সেটা হয় বাচ্চার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। যখন সেই লাইফ-সাপোর্ট-র সব যোগাযোগ মা নিজ হাতে হুট করে টেনে ছিঁড়ে ফেলে, টেনে-হিচড়ে তার সবধরনের সহায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যখন এই নির্মম অবস্থায় বাচ্চা আর বাঁচতে পারেনা - তখন আমরা সেটাকে মেনে নেই। কারণ সেটা হচ্ছে গর্ভের সেই পর্দার আড়ালে। কিন্তু একই সমাজে যখন কোনো মা - তার ৩-৪ বছরের ছেলেকে খুন করে, তখন হই-হুল্লোর পড়ে যায় সব জায়গায়। Media তে ফলাও ভাবে বিবরণ আসতে থাকে - কত পাষন্ড সেই মহিলা। আমরা বিলাপ করতে থাকি, মা-দের অবস্থান এবং তাদের মর্যাদা কিভাবে ধুলিস্যাত হচ্ছে। সমাজ কই যাচ্ছে - হায় হায়! কোনো বাপ যখন তার বাচ্চাকে মেরে ফেলে তখন বলা হয় - জানওয়ার ছাড়া সে কিছু না। কিন্তু যখন এক এক জন মা তার ৩-৪টা বাচ্চা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে, এক একটা বাপ চাচ্ছে সেই শিশুকে দূর করতে, আর এসব কোনো দোষ হিসেবে গন্য হচ্ছেনা - তখন সেই সমাজের ভিতর থেকে পঁচে যাচ্ছে, একটা পর্দার আড়ালে।

আল্লাহ নিশ্চই সুবিচারক। এই দুনিয়াতে এসব মার্ডার কেসের আসামীগুলো কোনো বিচারের সম্মুক্ষীন না হলেও - হাশরের ময়দানে হবে। আর তখন সেই নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোকে জিজ্ঞেস করা হবে - 'তোমাদের কোন দোষের কারণে মেরে ফেলা হয়েছিল?'

'দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিযে থাকি। নিশ্চই তদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ' (সুরা বাণী ইসরাইল, আয়াত ৩১)
'যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো' - (সুরা তাকবির, আয়াত ৮-৯)

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

কিছু ছোট প্রশ্ন (জাফর ইকবাল স্যার এর কাছে):

১। আমরা অনেকেই জানি ও বিশ্বাস করি আমাদের দেশের অনেক তরুণ অনেক শক্ত বিশ্বাস আর ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এবং সেই শক্ত বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটছে - তাদের প্রতিবাদী কন্ঠে আর তাদের অদম্য স্পৃহায়। বিশ্বাসে দুর্বলতা বা আবছা হবার কারণ কি কম বয়স? বিজ্ঞানের কোন theory এটাকে support করে? একটাই ফ্যাক্টর থাকতে পারে - সেটা হচ্ছে অভিজ্ঞতা। আর এই globalization, তথ্য প্রযুক্তি, আর ফাস্ট-ট্র্যাক জীবনধারার যুগে বোধ করি অভিজ্ঞতার সাথে বয়সের সম্পর্ক দিন দিন কমে যাচ্ছে। সুতরাং আপনার নিজের বয়সের অভিজ্ঞতাকে অন্য তরুণদের উপর short-circuit করাটার পেছনে বয়সের উদ্ধৃতি দেয়াটা কতখানি সময়োপযোগী?

২। বৈচিত্রের সৈন্দর্য (বা the beauty in diversity) - খুবই প্রাসঙ্গিক একটা বিষয়। কিন্তু বিশ্বাসে বৈচিত্র থাকাটার অর্থ কি 'আমার বিশ্বাসটাকে সত্য মনে করে অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান দেখানো' নয়? নিজের বিশ্বাসটা ঠিক - এই আত্মবিশ্বাসটুকু একটা তরুণ বা তরুনীর থাকতেই পারে। আমার পাশের মানুষটির ধারণা আমার বিশ্বাসে হয়ত সঠিক নয়। কিন্তু তাকে তার জায়গাতে থেকে তার বিশ্বাসে অটল থাকাটাকে সম্মান দেখানো - সেটাই আমার কর্ত্বব্য। এটাই তো সৈন্দর্য। A combination of self-confidence and mutual respect.
আপনার প্রশ্ন দেখে মনে হচ্ছে ধর্মীয় ব্যাপারে কোনো তরুণ আত্মবিশ্বাসী - এটাই আপনার কাছে একটা আবছা জিনিস। এবং এই আবছা জিনিস থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনি তরুণদের short-circuit করাতে চাচ্ছেন। আমার কাছে আপনার এই ধারনাটা খুবই অসম্মানজনক মনে হয়েছে। বৈচিত্রের সংগাটা কি এটাই হবে?

৩। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা - এটা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে একটু আধটু বিরাজ করে। কোনো ধর্মে বিরাজ করেনা। যাকগে। আপনি বারবার অন্য ধর্মের লোকদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ নিয়ে আসেন। একটাবার মুসলিমদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ এনেছেন কি? না এনে থাকলে - কেন? আপনার sense of diversity কি মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে গঠন হয়েছে? আপনি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখেন - তাহলে আপনার লিখায় অত্যাচারের বিষয়টা statistically correlated হওয়াটা যৌক্তিক ছিল। আজকের বিশ্বে মুসলিমদের মত অত্যাচারিত গোষ্টি সেক্ষেত্রে আর কেও নেই। কিন্তু আপনার লেখা দেখে মনে হবে - মুলসিম? তাও আবার অত্যাচারিত? সত্যি - short circuit!

মুসলিম অত্যাচারিতদের প্রতি আপনার এই অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন? আমাদের দেশেই যখন নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসে আত্মবিশ্বাসী কিছু মুসলিম তরুনকে আপনি টিটকারী দিয়ে লেখা ছাপান তখন - আপনার 'বৈচিত্রের সৈন্দর্য' কোথায়? যখন আপনার প্রতিবাদী কন্ঠ শুধুমাত্র আপনার পছন্দনীয় কিছু বিষয়ে সোচ্চার হয়ে উঠে - তখন আপনার এত বয়স হবার পরও চিন্তাধারা বা ধারণা কতখানি স্পষ্ট হয়েছে?

৪। রামুর ব্যাপারে আপনি বলেছেন এদেশের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদ আপনি দেখেননি। শুধুমাত্র ফেইসবুকএ 'লাইক' দেয়া দেখেছেন। আপনার এই ভ্রান্ত ধারণা লালন করার কারণ কি? কারণ কি এটাই কি যে আপনি শুধু ফেইসবুক-এর জগতে বসবাস করেন? রামুতে reconstruction এর কাজে কত তরুণ স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে যোগ করেছে - তা কি আপনার জানা নেই? তরুনদের শুধু চিন্তাধারা আপনার কাছে আবছা লাগছে না - আপনার অজানা তাদের কাজগুলোও আপনার কাছে আবছা লাগছে। নাকি? ঠিক তেমনি তাদের ধর্মীয় আত্মবিশ্বাস আপনার frequency তে না ধরা পড়ায় - সেটাও আপনার কাছে আবছা লাগার কারণ হতে পারে কি?

৫। আয়নাতে দেখছেন - আপনার চুল, গোফ সব পেঁকে সাদা হয়ে যাচ্ছে। আপনি নিজেকে বয়স্ক মনে করছেন না। কারণ 'you feel young at heart.' আপনার নিজেকে বয়স্ক মনে হয়না। আপনি দয়া করে আবার একটু আয়নার সামনে দাড়াবেন কি? চুল, গোফ - শুধু সাদা হচ্ছেনা। আপনি দেখবেন আপনার চামড়াও কুকড়িয়ে যাচ্ছে। There are visible wrinkles on your face. আপনার cellular senescence হচ্ছে। আপনার বয়স বেড়ে আপনি একটা সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সেই সত্য, সেই সময়টাকে - আজ পর্যন্ত কোনো নাস্তিকও মিথ্যা প্রমান করতে পারেনি। আপনি তো নিজেকে নাস্তিক ঘোষণা দেননি। তাই এই সত্যটাকে অনুধাবন করাটা আপনার কাছে আরো সহজ হবে। সে সত্যটা হচ্ছে মৃত্যু।

আমার শেষ প্রশ্ন - এই মৃত্যুকে আপনি কিভাবে দেখেন?

[Aging - রেফারেন্স এর জন্য Muhammad ibn Yusuf al-Haraw এর Ainul Hayat বইটি পরে দেখতে পারেন। আপনি হয়তবা ধারণা করবেন - মুসলিমদের ইসলামিক রেফারেন্স আপনার দরকার নেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন - এটাই হচ্ছে Aging Process নিয়ে বিশ্বের প্রথম নিয়মনিষ্ঠ বই। wikipedia-র মতে 'The book discusses behavioral and lifestyle factors putatively influencing ageing including diet, environment and housing conditions. Also discussed are drugs that may increase and decrease ageing rates.' বইটি আপনার পছন্দ হতে পারে।]