সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...১


আমেরিকা দেশটা একটা সালাদ বউল, তারমধ্যে নিউ ইয়র্ক আরো বেশি। কে আমেরিকান আর কে না বোঝা মুশকিল; সাবওয়ে ট্রেন গুলাতে উঠলে বোঝা যেত দেশটা একই সময় চীন, ইন্ডিয়া, পেরু এবং এরাবিয়ার লোক দিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছে। টুরিস্ট ছাড়া সব আমেরিকান। বলা হয় 'ইটস ল্যান্ড অফ অপর্টিযুনিটি'....তাই পৃথিবীর সব কোন থেকে মানুষ ছুটছে সেই দেশে। বলা হয় 'ইটস এন ওপেন সোসাইটি' - সবার জন্য খোলা। 

আম্মারকে নিয়ে খোলা জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার মানে ছিল একটা ম্যারাথন। খোলা জায়গা মানেই তার কাছে খেলার মাঠ। আর শপিং সেন্টার হলে তো কথায় নেই - খেলার মাঠ, সাথে ফ্রি হাতের নাগালে টেনে নামানোর জিনিস। পিছু নিতে ২ জন আর দৌড়াতে লাগত ১ জন। কারো শপিং কার্টের সামনে আর কারো চলার পথে গিয়ে থেমে যেত। আর বারবার সরি বলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল।

ওখানে কিছু শপিং ব্র্যান্ড আছে - যেগুলো প্রতিটা স্টেট এই দেখা যাবে। এক একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এরকম নামকরা ৬-৭ টা শপিং ব্র্যান্ড একসাথে করে রেখেছে তারা। এরকম একটা ব্র্যান্ড হচ্ছে কস্টকো। কস্টকোর বৈশিষ্ঠ একটু ভিন্ন - কিনলে হোলসেলে কিনতে হবে। সাবান কিনতে গেলে - ১৬ টার কমে না। বাচ্চাদের ডায়াপার কিনতে গেলে - একবারে ৮০টার প্যাকেট। চকলেটের এক প্যাকেটে ২০০টা। সস্তা পরে দেখে অনেকেই যায় - কযেক সপ্তাহের বাজার করে আনার জন্য। হাইলি কমার্শিয়াল এক দেশ - ক্রেতারও কমতি নেই। হাতের নাগালে সবকিছু দিয়ে দেওয়া। ভ্যারাইটি এবং চয়েস এর বাহার সবকিছুতেই। সারা সপ্তাহ ধরে ৮-১২ ঘন্টা করে খাটতে হবে - প্রতিদিনের জীবনে সেই খাটুনির ফল পায় এসব চয়েসের মধ্য দিয়ে। 

সেদিন কস্টকোর আইলের ভেতর আম্মারকে খুঁজে বের করে যেই কোলে ওঠাতে যাব - এক বয়স্ক মহিলার সামনে গিয়ে সে দাড়িয়ে গেল। সাথে সাথে 'সরি' বলে ওকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম - মহিলা তখন আমাকে কন্ফ্রণটিঙ ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো - 'Why do you wear that on your face?' [নীকাব দেখে বলল]

প্রথমে একটু হকচকিয়ে গেলাম। সাথে সাথে মনে হলো - জিজ্ঞেস করতেই পারে; কারণ শুধুমাত্র হিজাব পরে এরকম মহিলার সংখ্যাই কম।

বললাম, 'It's because of my religious belief'

তখন সে বেশ রুক্ষভাবে বলল, 'It is NOT your religious belief. I know it's NOT your religious belief. Your religion doesn't ask you to do that'

বুঝতে বাকি রইলোনা - সে জানার জন্য আমাকে প্রশ্ন করছেনা।

আমার ননদের দিকে দেখিয়ে বলল (সে হিজাব পরে) - 'She doesn't put that thing on her face. Why don't you just cover like that?'

ধৈর্য ধরে উত্তর দিলাম, 'It's a choice. You have the choice to pick which you would prefer. There are several interpretations to pick from'.

সে তখন আরো উচ্চ গলায় বলল, 'Don't give me that. I have studied your religion. Do you know why I think you do that? I think it's because you are a terrorist.' 

:-|কি আশ্চর্য!

এর আগে অফিসের কাজের কারণে Scandinavian লোকজনের সাথে মিশেছি। মিশে মনে হয়েছিল - ওদের কাছে 'নিকাব' কোনো সময় - individual choice of an independent woman - মনে হয়না। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাবে যখন বুঝিয়েছি এটাই আমার ইচ্ছা - my choice - তখন তারা সেই choice কে শ্রদ্ধা দেখিয়েছে। ধর্মের এই বিধানের অন্তর্নিহিত কারণ জানতে চেয়েছে।

কিন্তু এই মহিলা ছিল ভিন্ন। সে ক্ষোভে ফেটে পরছিল - এই আমি এই রকমের পোশাকে তার সামনে দিয়ে যাচ্ছি, সেটাই সহ্য হচ্ছিলনা।

আমি তারপরও ঠান্ডা মাথায় বললাম, 'Not a single terrorism act in recent years inside US was done by people who cover their faces, was it?'

সে তখন আরো ক্ষেপে গেল। বলল, 'How do I know what your face looks like? You wouldn't show your face to me, would you? Because you are one.'.

মহিলাকে যখন তাও দেখালাম, সে একটু থেমে আবার বলল - 'But I still think you are a terrorist'.
মহিলা চলে গেল।

বেশ! আমার নিকাব না, আমার চেহারাও এখন 'terrorist' !

এমনও হয়েছে - ঠোঁটে সিগারেট, হাত-পায়ে টেট্টু এবং ভ্রুর উপর পিয়ার্স করা মহিলা বের হয়ে যাবার সময় আমার জন্য শপিং সেন্টারের দরজা ধরে রেখেছে যাতে বাচ্চাসহ সহজে বের হতে পারি। আবার কারো মুখের উপর অন্য কাউকে 'terrorist' গালি দিতেও বাঁধেনা। 

An open society, alright. Openness with some ‘if-s’ and ‘but-s’. 

(Contd...)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন