মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

বৈচিত্রময় দেশ থেকে ফিরে ...৩

3. 

প্লেন যখন ল্যান্ড করতে থাকে - যেকোনো শহর/এলাকার একটা বার্ডস-আই-ভিউ পাওয়া যায়। ১৯৯০ -৯৪ সাল পর্যন্ত ঢাকায় যখন প্লেন ল্যান্ড করত, তখন উপর থেকে অনেক সবুজ দেখা যেত - মাঝে মাঝে পানির প্রবাহ। কিছুদুর পর পর ঘন বসতি। দেখলেই চোখটা জুড়িয়ে যেত। আর ঠিক ২০ বছরের মধ্যে সেই দৃশ্য পুরা পাল্টে গিয়েছে; এখন ল্যান্ড করার সময় মনে হয় - একগুচ্ছ কংক্রিট নিয়ে কেও মুড়ির টিনের ভেতর ঝাকুনি দিয়ে ছুড়ে ফেলেছে। না আছে সবুজ, না কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আঁকা যায়। 

জে, এফ, কে এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করার আগে উপর থেকে দেখে মনে হয় কিছু জ্যামিতিক-আকার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেমন যেন গোছালো জ্যামাতিক সমষ্ঠি - তার মাঝে মাঝে সবুজ রেখা। মনে হচ্ছে এক অদৃশ্য ফ্রেম শহরের প্রতিটা ভাগকে আলাদা করে সিকুএন্স করে রেখেছে। যেমন ভিউ তেমন বাস্তব চিত্র। শহরের এক ল্যাম্প-পোস্ট থেকে শুরু করে ব্রিজ পর্যন্ত - সব একদম প্ল্যান্ড। কয়টা বাড়ি, কোথায় পার্ক, কোথায় অফিস, কয়টা কারখানা - সব লং টার্ম চিন্তা করে প্ল্যান হয়েছিল। অনেকে হয়ত ভাববে - উন্নত দেশ আর উন্নয়নশীল দেশের ভেতর পার্থক্য থাকবেই। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ওই শহরের প্ল্যানতো আর এখন হয়নি। শত বছরের কাঠামো এখনো দাড়িয়ে আছে ওখানে। আর ওটাকে ঘিরেই তৈরী হয়েছে নতুনগুলো। 
সো - ইটস আ ম্যাটার অফ মায়্যান্ডসেট। 

তাই অলৌকিকভাবে আজ থেকে যদি এদেশের নেতা/নেত্রীরা সেরকম সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেন - কয় বছর পর সেরকম জ্যামাতিক আকৃতির ভিউ দেখা যাবে ল্যান্ডিং এর সময় - আল্লাহ মালুম।

কয় বছর আগে - বুএটের আরবান প্ল্যানিং নিয়ে পড়াশোনা করা একজন বলছিল, ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক এক্সপার্ট অনেক কাজ করেছেন ঢাকা প্ল্যানিং এর উপর। লিখিত আকারে পরামর্শও দিয়েছেন এই দেশের উপর-ওয়ালাদের। আজ পর্যন্ত কাজে দেয়নাই। এর ফল হচ্ছে - ঢাকা এমন পর্যায় চলে যাচ্ছে যে একটা নিরাপদ, বাসযোগ্য শহর করতে পুরাটা মুছে আবার গড়তে হবে। জ্যামাতিক আকৃতিতো অনেক পরে। আর্থকোএক-প্রণ পাতালের উপর এই নাজুক প্ল্যানিং। দেশপ্রেমিক ভর্তি এক দেশ। 

আমেরিকাতে ঢোল বাজিয়ে কেও কাউকে বলছেনা - যে সে দেশপ্রেমিক। সমষ্ঠিগত ভাবে দেশের জন্য কাজ হচ্ছে প্রতিটা জিনিসের অধিকারের উপর নজর দিয়ে (জেনেরালি স্পীকিং); হতে পারে সেটা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, কিন্তু মজ্জাগত হয়ে গেছে অভ্যাস। একটা শহর কিভাবে গঠন হবে - তা নিয়ে চিন্তা হয়েছে একশত বছর আগে। এই দেশপ্রেম হয়তো তাদেরকে অনেকটা সেল্ফ-সেন্ট্রিক করে ফেলছে (যা নিজেদের দেশের জন্য ভালো দেখাবে তাই করতে রাজি তারা); কিন্তু ফলাফল তারা ভোগও করে যাচ্ছে। 

তাই আজকে দেশে যখন খুঁজে বেড়াচ্ছি বাচ্চার খেলার জন্য একটা মাঠ, আর দূষণমুক্ত বাতাস - ওই দেশের বাচ্চাগুলার এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, তা ভাবতেই পারেনা। আর এই প্রজন্মকে দেশের ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে দেখলে - আমাদের কোয়ালিটি কথায় থাকবে? 

সেই চিন্তা আমেরিকানরা আরো ১০০+ বছর আগে করে গিয়েছে। আর আমরা করছি পোস্টারিং। 

[Contd...]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন