অফিসে ঢুকেই সে নিজেই প্রথমে পিয়নকে সালাম দেয় -- "আসসালামু আলাইকুম"। ভাঙ্গা বাংলায় প্রশ্ন করে "বালো আচেন?" পিয়নও হেসে উত্তর দেয় "জ্বি, ভালো আছি"।
সে গিয়ে বসে তার টেবিলে আর সবার সাথে। লিফটে উঠলে জায়গা করে দেয় অন্যদের উঠার জন্য-- যখন একটু বেশি মানুষ উঠে পড়ে, তখন সে পিছে চলে যায় যাতে আরেকটু জায়গা হয়। তার টেবিলে কোনো ফোন রাখে নাই। কারণ, আশে পাশের লোকদের ল্যান্ড-ফোন না থাকলে তার রাখা উচিত না। ক্যান্টিনে গিয়ে সবার সাথে বসে খাবার আর কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যায়। কার কি সমস্যা কথার মধ্যে বের করার চেষ্টা করে। ঐদিন এসে প্রশ্ন করলো-- বাংলাদেশে কিছু মানুষ "কেমন আছেন' এর উত্তরে একটা শব্দ বলে -- যেটা সে বুঝে নাই! অনেক খোঁজাখুঁজির পর বের হলো যে শব্দটি হচ্ছে 'আলহামদু লিল্লাহ'। ব্যাস। এরপর থেকে 'বালো আচি' এর সাথে সে যোগ করলো -- "আলহামদু লিল্লাহ"।
একবার সে তার মেয়ের কথা বলছিল - মেয়ের ঘরে তার তৃতীয় নাতি/নাতনি হতে যাচ্ছে। তার মেয়েটি কর্মজীবী - প্রতিটি ছেলে/মেয়ে হবার পর অফিস নাকি তাকে ১ বছর করে ছুটি দিয়েছে। সে যেখানে থাকে সেখানে 'family is more important than work; there is nothing more valuable than a life'. অফিসে যে 'কালচার' (culture) শুরু করেছে - সেটা নাকি সবচেয়ে 'মডার্ন থট প্রসেস' (modern thought process)। যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক না কেন, সবাই একসাথে বসবে, কারো কোনো আলাদা ঘর থাকবেনা, কর্মকর্তাদের মনে কোনো অহংকার থাকবেনা...
ঠিক এই ধারণাগুলো যখন অফিসে আমাদের দেশের মানুষদের মধ্যে ঢুকানোর চেষ্টা চলছে-- অনেকেরই সেটা মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের অনেকেরই মানতে কষ্ট হয় যে এত কষ্ট করে উপরে উঠে কীভাবে একই কাতারে সামিল হই আমরা? তবুও বলব মেনে নেবার খাতিরেই মেনে নিচ্ছি আমরা। আসলে তো আমরা ভুলেই চলেছি আমাদের আদর্শ, আমরা ভুলতে চলেছি 'সুন্নাহ'। যেই সুন্নাহ আমাদের শিখিয়েছে মানুষের জন্য মানুষ হতে, মানুষের মতন মানুষ হতে। আমরা এখন প্রাণপণে রপ্ত করার চেষ্টা করছি ১ দশক আগের 'পশ্চিমা' রীতিনীতিগুলো -- কারণ আমরা ভাবছি ওটাই আমাদের জন্য ভালো। অন্ধ বিশ্বাস করতে শিখেছি ওই নীতিগুলোর। এই পশ্চিমা নীতি এখন বদলের পথে -- কারণ তারাই প্রমাণ পেয়েছে এই নীতি পরিবর্তন না হলে সর্বসাধারণের জন্য সেটা ভালো হবেনা আর তাই সেটা পরিবর্তন করতেও তাদের কোন সংকোচ নেই। পরিবর্তিত হয়ে তারা এখন এসব বিষয়ে ক্রমাগত উন্নতির শিখরে উঠছে।আর আমরা নামছি ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে।
যখন আমি অফিসের এই 'লিডার' কে দেখি, তখন মনে হয় আমাদের চেয়ে সুন্নাহর উদাহরণ সে বেশি রপ্ত করেছে। সে নিজে মেনে তারপর অন্যকে মানতে বলছে-- অথচ সেই এই ধর্মাবলম্বীও না। কিন্তু তার কাজে কর্মে প্রকাশ পাচ্ছে সুন্নাহর মানবিক দিকগুলো। আর আমরা এখনো সেটা শিখতে পারিনি, শেখাতেও পারিনি। আমরাই - যারা কিনা সেই মানবিকতার পান্ডুলিপি বয়ে চলেছি গত ১৪০০ বছরেরও বেশি। আমরা কি এখনো সেই পান্ডুলিপির উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারিনি? নাকি এখনো ভাবছি আমাদের জীবনের সাথে এই মানবিকতার নীতি তখনি খাপ খাবে যখন আমরা অন্যদেরকে সেটা রপ্ত করতে দেখব? নাকি যখন আমাদের সংস্কৃতির সাথে সেটা মানানসই হবে? নিজের মাথা হেট হয়ে আসে।
আর আমি সেই শ্রদ্ধেয়, ভিনদেশী leader এর তাকিয়ে ভাবি - কত সুন্দর তার এই নীতি।
এক ইসলামী চিন্তাবীদ, অ্যামেরিকা ও মিশর ঘুরে আসার পর মন্তব্য করেছিলেন, "আমি সেখানে(অ্যামেরিকায়) মুসলিম দেখিনি কিন্তু ইসলাম দেখেছি, আবার মিশরে মুসলিম দেখেছি কিন্তু ইসলাম দেখিনি।"
উত্তরমুছুনওরা আমাদের সুন্নাহ থেকে অনেক কিছুই নিয়েছে কিন্তু আমরা নিজেরাই তা পারিনি! :(
একদম সত্য কথা :(
উত্তরমুছুন