সোহরাওয়ার্দী হসপিটালের করিডরে বসে মোবাইলে ইন্টারনেট গুতাগুতি করছি আর অপেক্ষা করছি আব্বার টেস্ট শেষ হবার জন্য। যেই বেঞ্চে বসে আছি - ওই বেঞ্চের অন্য মাথায় দুই ভদ্রলোক বসা। দুজনেই মধ্যবয়েসি- দুজনই রোগী। একদম সাদাসিদে কাপড়; একজন লুঙ্গি আর শার্ট আর অন্যজন সাফারি পরে এসেছে। লুঙ্গি-শার্ট
পরা ভদ্রলোকের সাথে তার সঙ্গী এসেছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শরীর বেশ খারাপ, বেশ দুর্বল-- মাথার চুল পড়ে গিয়েছে। পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল। অন্য ভদ্রলোক আরেকটু ফিট -- সে এসেছে একা। দু'জন বসে গল্প করছিল। আমার মনোযোগ ফেসবুক, gmail আর খবরের সাইটের দিকে হলেও মাঝে মাঝে তাদের দু'একটি কথা কানে আসছে। কিন্তু যখন তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের গল্প বলা শুরু করলো, তখন সেদিকে খেয়াল না করে পারলামনা-- তারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছে!
লুঙ্গি-শার্ট পরা লোকটি গল্পের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায় চলে যাচ্ছে - আর তার সেই কৃতি-ভরপুর জীবনের ছবি ভেসে উঠছে। কোন ব্যাচে ছিল, এ সময়ের কোন স্বনামধন্য ব্যক্তিরা তার ক্লাসমেট, কীভাবে দাবি আদায় করেছিল তারা.... একটার পর একটা যখন বলে চলেছিল - তখন শুধু এটুকুই মনে হচ্ছিল - সে সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর ছাত্র ছিল সে-- কতখানি কৃতিত্বের অধিকারী সে! এত উৎফুল্লভাবে সে কথা বলে যাচ্ছে যে শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারটা তাকে দেখে এখন বোঝার উপায় নেই। অসুস্থতার ছাপ তখন আর তার চোখে থাকছেনা। এখনকার সমাজে বেশভূষা দেখে মানুষের 'স্ট্যাটাস' নির্ণয় করার যেই প্রথা-- সেই প্রথাকে সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ করে চলেছে তার জীবন কাহিনী।
দু'জন গল্প করতে করতে চলে এলো এখনকার সময়ে। কার ছেলে মেয়ে কোথায় ... সব দূরে চলে যাচ্ছে পড়াশুনার প্রয়োজনে ...তারা একা হয়ে যাচ্ছে...কথা বলার মানুষ পাওয়া যায়না...আল্লাহ ব্যবস্থা করবেন নিজেরাই নিজেদের সান্তনা দিচ্ছে এই বলে যে -- 'এটাই জীবনের নিয়ম'। জীবনের বেশিরভাগ সময়টুকু পার হয়ে এসেছে - এখন হয়তো সান্তনা আর অতীতের স্মৃতি - এদুটোই তাদের জীবনের আলো হয়ে আছে। ভর দুপুরে দু'জনের ওই বেঞ্চে বসে আলাপ - আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল এক সুন্দর অতীতে। অপরিচিত হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেদিন ওনাদের সাথে কথা বলতে পারিনি...
সেই বেঞ্চের ছবি এখনো চোখে ভাসে। সেদিনটাকে বেশি মনে হয় যখন রাস্তায় হাঁটতে চলতে দেখি আজকালকার 'ultra-cool' বনে যাওয়া 'generation Y'-দের। কানে ear-plugs লাগিয়ে নিশ্চিন্তে হেঁটে চলছে তাদের পথ ধরে। জিন্সের প্যান্টের লাইনিং শেষ সীমান্তে পৌছে গেছে অথবা স্টাইলিশ জুতার হিলের শব্দ হচ্ছে। টি-শার্টের লিখনি দিনকে দিন বীভৎস হচ্ছে ; আর কামিজগুলোকে কামিজ বলা চলেনা। তাদের চোখের দৃষ্টি একটা ক্ষণের জন্য নিচে নামে নাকি সন্দেহ।
ফোনে কথা না বললেও ভাব দেখাচ্ছে মোবাইল ফোনে কত আলাপ করে যাচ্ছে -- গলার স্বর তখন তাদের তুঙ্গে। এখনো জীবনে তারা প্রতিষ্ঠিত না। কিন্তু দেখে মনে হবে ওদের চেয়ে আকর্ষণ এবং মনোযোগ পাবার যোগ্য আশে পাশে আর কেউ নাই। জীবনের গন্তব্য কোন দিকে সেটা তারা নিজেরাই জানে। ইংরেজিতে একটা phrase আছে - 'walking with their heads in the clouds'। তিলে তিলে সেটা প্রমাণ করে চলেছে এই সমাজের 'in-the-trend' এসব গ্রুপের ছেলেমেয়েরা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে "দেশের মানুষের উন্নতির জন্য তোমাদের অবদান কতটা??" তাদের উত্তরটাও জানতে ইচ্ছে করে।
ভয় হয় এই ভেবে যে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম -- দিনকে দিন চিত্র যেভাবে বদলাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে সেদিন খুব দূরে না যেদিন মানুষের মূল্যবোধ ও গুণাবলীর চর্চার মূল্য শুণ্যের কোঠায় পৌঁছাবে। আর প্রাচুর্য, পোশাক আর দাম্ভিকতার মূল্য বেড়ে যাবে। জাতিগত দিক দিয়ে তখন গৌরবের বিষয়গুলো দূরবীন দিয়ে খুঁজতে বের হতে হবে।

লুঙ্গি-শার্ট পরা লোকটি গল্পের এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায় চলে যাচ্ছে - আর তার সেই কৃতি-ভরপুর জীবনের ছবি ভেসে উঠছে। কোন ব্যাচে ছিল, এ সময়ের কোন স্বনামধন্য ব্যক্তিরা তার ক্লাসমেট, কীভাবে দাবি আদায় করেছিল তারা.... একটার পর একটা যখন বলে চলেছিল - তখন শুধু এটুকুই মনে হচ্ছিল - সে সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর ছাত্র ছিল সে-- কতখানি কৃতিত্বের অধিকারী সে! এত উৎফুল্লভাবে সে কথা বলে যাচ্ছে যে শারীরিক অসুস্থতার ব্যাপারটা তাকে দেখে এখন বোঝার উপায় নেই। অসুস্থতার ছাপ তখন আর তার চোখে থাকছেনা। এখনকার সমাজে বেশভূষা দেখে মানুষের 'স্ট্যাটাস' নির্ণয় করার যেই প্রথা-- সেই প্রথাকে সম্পূর্ণভাবে চূর্ণ করে চলেছে তার জীবন কাহিনী।
দু'জন গল্প করতে করতে চলে এলো এখনকার সময়ে। কার ছেলে মেয়ে কোথায় ... সব দূরে চলে যাচ্ছে পড়াশুনার প্রয়োজনে ...তারা একা হয়ে যাচ্ছে...কথা বলার মানুষ পাওয়া যায়না...আল্লাহ ব্যবস্থা করবেন নিজেরাই নিজেদের সান্তনা দিচ্ছে এই বলে যে -- 'এটাই জীবনের নিয়ম'। জীবনের বেশিরভাগ সময়টুকু পার হয়ে এসেছে - এখন হয়তো সান্তনা আর অতীতের স্মৃতি - এদুটোই তাদের জীবনের আলো হয়ে আছে। ভর দুপুরে দু'জনের ওই বেঞ্চে বসে আলাপ - আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল এক সুন্দর অতীতে। অপরিচিত হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেদিন ওনাদের সাথে কথা বলতে পারিনি...
সেই বেঞ্চের ছবি এখনো চোখে ভাসে। সেদিনটাকে বেশি মনে হয় যখন রাস্তায় হাঁটতে চলতে দেখি আজকালকার 'ultra-cool' বনে যাওয়া 'generation Y'-দের। কানে ear-plugs লাগিয়ে নিশ্চিন্তে হেঁটে চলছে তাদের পথ ধরে। জিন্সের প্যান্টের লাইনিং শেষ সীমান্তে পৌছে গেছে অথবা স্টাইলিশ জুতার হিলের শব্দ হচ্ছে। টি-শার্টের লিখনি দিনকে দিন বীভৎস হচ্ছে ; আর কামিজগুলোকে কামিজ বলা চলেনা। তাদের চোখের দৃষ্টি একটা ক্ষণের জন্য নিচে নামে নাকি সন্দেহ।

ভয় হয় এই ভেবে যে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম -- দিনকে দিন চিত্র যেভাবে বদলাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে সেদিন খুব দূরে না যেদিন মানুষের মূল্যবোধ ও গুণাবলীর চর্চার মূল্য শুণ্যের কোঠায় পৌঁছাবে। আর প্রাচুর্য, পোশাক আর দাম্ভিকতার মূল্য বেড়ে যাবে। জাতিগত দিক দিয়ে তখন গৌরবের বিষয়গুলো দূরবীন দিয়ে খুঁজতে বের হতে হবে।